মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিতে দেশজুড়ে প্রতারণার ছক এঁকেছে একটি অসাধু চক্র। সুকৌশলে এই প্রতারক চক্রটি ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে সরকারিভাবে (টেলেন্টপুল অথবা সাধারণ গ্রেডে) বৃত্তি লাভ করেছে তাদের কিংবা তাদের অভিভাবকদের ব্যাংকে বৃত্তির টাকা পাঠানোর নামে উল্টো ব্যাংক থেকেই হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গত এক সপ্তাহে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
প্রতারণা এই ফাঁদ এতটাই সুচারু যে, তারা শিক্ষার্থীদের কলেজ, শ্রেণি শিক্ষক, এমনকি অধ্যক্ষের নাম নিয়েই অভিভাবকদের ফোন করে ব্যাংকের নাম এবং মোবাইলে ওটিপি নম্বর নিয়ে নিচ্ছে। তথ্য দিতে বিলম্ব কিংবা অন্যকোনো কারণে বৃত্তির সব টাকা ফেরত যাবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীকে এভাবে ফোন করে সরাসরি অধ্যক্ষের নাম নিয়ে অভিভাবকদের ফোন করে ব্যাংকের নাম জানতে চান। একইভাবে রাজধানীর অন্যান্য একাধিক কলেজেও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করেও এই প্রতারক চক্রটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছে।
উত্তরা রাজউক মডেল কলেজের মামুন নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষাবোর্ড কিংবা কলেজ থেকেই অভিভাবকদের নম্বর সংগ্রহ করছে এই প্রতারক চক্রটি। ফরে তারা শিক্ষার্থীদের নাম ধরে ধরে অভিভাবকদের ফোন করে বৃত্তির টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে। অনেক অভিভাবক কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উত্তরার রাজউক কলেজের এই অভিভাবক আরো জানান, আমার কাছে আজ (বৃহস্পতিরার) বেলা ১১টা ১৫ মিনিট থেকে ১১টা ২২ মিনিটের মধ্যে তিনটি নম্বর থেকে ফোন আসে। এর মধ্যে আমি ট্রু কলারে চেক করে দেখি ০১৬০৮৪৫৫০৪৮ নাম্বার ব্যবহারকারীর নাম মো: আসাদুল জামান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের লোগো সংবলিত ছবিও রয়েছে। একইসাথে আরো দুটি নম্বর থেকেও প্রায় কাছাকাছি সময়ে বৃত্তির টাকার বিষয়ে তথ্য জানতে ফোন আসে। এ দুটি নম্বর হলো- ০৯৬৩৮৬৩২৭৭৭ ও ০১৩৩৭১৫০৩৩২। তারা মোবাইলে ওটিপি দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা রিসিভ করতে অনুরোধ জানায়। আর সাথে সাথেই আমার একাউন্ড থেকে প্রকারক চক্রের মার্চেন্ট একাউন্টে পার্চেচ অ্যান্ড সার্ভিস খাতে ৫০ হাজার টাকা কেটে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে আমার মোবাইল একাউন্ড ব্লক করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল জানান, প্রতারক চক্র নানা সময়ে তাদের কৌশলও পাল্টায়। তবে আমাদের সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, প্রতারণার এই ফাঁদ বিষয়ে আমরা একটি সতর্কতামূলক সার্কুলার জারি করার বিষয়ে সিদ্ধান নেব। যেহেতু বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এখন আমরাও চেষ্টা করবো কিভাবে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদেরকেও সজাগ ও সতর্ক করা যায়।
অভিভাবদের দাবি- বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সাইভার সিকিউরিটি বিভাগকেও আরো তৎপর হওয়া জরুরি। অন্যথায় এভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও নিয়মিতভাবেই নাজেহাল হতে থাকবে। কাজেই এর একটি সুরাহা হওয়া দরকার।
এ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে মোট বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭৮৭ জন। মেধাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসিক ৬০০ টাকা এবং বছরে এককালীন ৯০০ টাকা পাবেন। সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩৫০ টাকা এবং বছরে এককালীন ৪৫০ টাকা পাবেন। বৃত্তি প্রদানের জন্য বাজেট থেকে রাজস্ব খাতের ‘বৃত্তি-মেধাবৃত্তি’ বরাদ্দ করা হয়েছে।



