রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক চেতনার সমন্বয়ে গঠিত এই অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মের মধ্যে কবিদ্বয়ের দর্শন ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সোমবার (২ জুন) আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন রয়েল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. এ এন এম মেশকাত উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ এস এম মুশফিকুর রহমান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. দিপু সিদ্দিকী এবং ইংরেজি বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহযোগী অধ্যাপক জহরত আরা।
অধ্যাপক মেশকাত উদ্দিন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল মানবতার কবি। তারা ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্য ও দর্শনে জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানবমুক্তির পথ দেখিয়েছেন। নজরুল তার কলম ও কণ্ঠে সমাজ পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। তাদের শিক্ষা আজকের সমাজে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।’
বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার মুশফিকুর রহমান রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন এবং শিক্ষাকে প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা আজকের যুগেও অনুকরণীয়।’
অনুষ্ঠানে ‘রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-শিক্ষা ভাবনায় দু’ মহামানব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. দিপু সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সৃজনশীল শিক্ষার পথপ্রদর্শক। শান্তিনিকেতনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষাকে হৃদয়ের মুক্তি হিসেবে দেখেছিলেন। অপরদিকে, নজরুল ছিলেন বিদ্রোহের কবি, যিনি কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সাম্য, মানবতা ও প্রতিবাদের বার্তা দিয়েছেন। তাদের শিক্ষা ও আদর্শ তরুণ প্রজন্মের জন্য আজো দিকনির্দেশক।’
ইংরেজি বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক জহরত আরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, দার্শনিক ও মানবতাবাদী চিন্তাবিদ। তার সাহিত্য ও দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সাম্প্রতিক সঙ্কট ও বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে।’ তিনি নজরুলের সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। রয়েল ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাবের সদস্যরা নজরুলের ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি দলীয় কণ্ঠে পরিবেশন করেন। আবৃত্তি ও গানে অংশগ্রহণ করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা ইউকি বড়ুয়া, সহযোগী অধ্যাপক জহরত আরা, শিক্ষার্থী আফরিন ও রাজু রহমান। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজু রহমান ও আফরিন।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. আমির খসরু, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক আমেনা খাতুন, সহকারী অধ্যাপক মালবিকা মজুমদার, সিইসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক উম্মে মুসলিমা, প্রভাষক আরিফ হোসেন, প্রভাষক শামিমা আক্তার, সরকারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এই ধরনের আয়োজন নিয়মিতভাবে করে যাবার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সাহিত্য, মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ বপন করা যায়।