উচ্চশিক্ষার গুণগত পরিবর্তন ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদানের উদ্দেশে পরিচালিত চার হাজার কোটি টাকার ‘হিট প্রজেক্টে’ (হায়ার এডুকেশন একসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন) অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষকদের একাংশ। গবেষণা প্রকল্প অনুমোদনে প্রকৃত গবেষকদের অবমূল্যায়ন করে আওয়ামীপন্থীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। একইসাথে ইসলামী গবেষণাকে অবহেলা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এ সময় ওই বিভাগের অধ্যাপক ড. মিন্নাতুল করিমের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমান, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মো: আরিফুজ্জামান খান ও সহযোগী অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, প্রজেক্টের দায়িত্বে আওয়ামীপন্থীরা থাকায় গবেষণা প্রজেক্ট নির্বাচনে মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন না করে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। একইসাথে
বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের প্রজেক্টগুলো কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে।
তারা জানান, প্রায় ৪০ শতাংশ লো প্রোফাইলধারী (১০০ এর কম সাইটেশন) গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ সাইটেশনের কম আছে এমন ৪০ শতাংশ গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। এদিকে এর থেকে হাই প্রোফাইলধারী গবেষকদের প্রজেক্ট বাদ দেয়া হয়েছে। একইসাথে অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলার একমাত্র ইসলামী গবেষণা প্রজেক্ট প্রাথমিক নির্বাচন করা হলেও সাক্ষাৎকার নেয়ার পর তা বাদ দেয়া হয়েছে। এদিকে সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ে কোনো ইসলামী গবেষক ছিলেন না বলে অভিযোগ অধ্যাপক ড. গোলাম মওলার। এ প্রজেক্টের মধ্যে কোনো ইসলামী প্রজেক্ট না থাকাকে বৈষম্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া প্রজেক্ট নির্বাচনে সাক্ষাৎকারের কোনো শর্ত না থাকলেও নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি এ শিক্ষকদের।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচিত প্রজেক্টগুলো বাতিলসহ তিন দফা দাবি পেশ করা হয়। অন্য দাবিগুলো হলো- ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান ও প্রকল্প পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং নতুন করে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রজেক্ট নির্বাচন করতে হবে।
এদিকে দাবি না মানা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হিট প্রজেক্টে যে ম্যানুয়াল আছে, ম্যানুয়ালের নিয়মে যেভাবে বলা আছে সেই নিয়ম অনুযায়ী সিলেক্টেড করা হয়েছে। ম্যানুয়ালের বাইরে কোনো কিছু হয় নাই।’
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
উল্লেখ্য, ইউজিসির বাস্তবায়নাধীন ‘হিট প্রজেক্টে’ বাংলাদেশ সরকারের অর্থের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংক বহন করবে।