মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

‘এই পাথরটা যেন আমার ভাইয়ের ওপর নয়, আমার বুকের ওপর পড়েছে।’

নুর আলম, জবি সংবাদদাতা
জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল |নয়া দিগন্ত

রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে হত্যার প্রতিবাদ ও দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রায় সাহেব বাজার, তাতিবাজার, নয়া বাজার, মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা প্রদক্ষিণ করে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। মিছিলে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন, বিএনপির অনেক গুণ, দশ মাসে দেড় শ’ খুন, আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে, জিয়ার সৈনিক, চাঁদা তোলে দৈনিক, চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম সাম্য, শান্তিপূর্ণ একটি চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ। হাসিনা যাওয়ার বিকাল থেকে একটি দল আবারো চাঁদাবাজি শুরু করেছে। আবু সাঈদ, শহীদ ওয়াসিমরা, শহীদ সাজিদের ভাইয়েরা মারা যায়নি। প্রয়োজনে আবার জুলাই হবে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মো: নূর নবী বলেন, ‘এই পাথরটা যেন আমার ভাইয়ের ওপর নয়, আমার বুকের ওপর পড়েছে। এই ক্যাম্পাসে যেমন একসময় ছাত্রলীগ বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছিল, ঠিক একই ঘটনা এবার মিটফোর্ডে ঘটেছে। ১০ মাস না যেতেই আপনারা আপনাদের দলের লোকদেরই হত্যা করেছেন। হাসিনার দায়িত্ব আপনাদের ওপর দিয়ে যায়নি। ৫ আগস্টের মতো এবারো প্রতিহত করতে বাধ্য হব।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের হত্যা করা হলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। সারাদেশে যে নৈরাজ্য চলছে, তা হতে দেবো না। প্রয়োজনে আবারো জুলাই আসবে।’

ইসলামি ছাত্রশিবিরের জবি সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আরিফ বলেন, ‘প্রথমেই মিডিয়ার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই ৯ জুলাইয়ের ভিডিও ১১ জুলাই কেন প্রকাশ হলো? আপনারা কী লুকাতে চান? ৭১-এর পর থেকে দু’টি পরিবার-শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার ও জিয়াউর রহমান পরিবার-দেশ চালিয়ে আসছে। আমরা এই দু’ রহমানী পরিবার থেকে মুক্তি চাই। ইন্টারিম সরকারকে বলছি, দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে চাঁদা না দেয়ায় জনসম্মুখে পাথর দিয়ে মানুষ খুনের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। আমরা মনে করি, যারা এই খুনের সাথে জড়িত, তারা জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করতে পারে না। বিএনপি যদি এ ঘটনার বিচার না করে, তবে তাদের রাজনীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। আর ইন্টারিম সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, কোনো দলের ম্যান্ডেট নয়। আমরা দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’

সমাবেশে বক্তারা মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাসহ সারাদেশে সংঘটিত চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতার দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।