সবশেষ ভূমিকম্প দেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত করেছে। সাথে ভূমিকম্পের সময় এমন কিছু ঘটনাও ঘটেছে, যা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, কে কাকে কতটা ভালোবাসে! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমনই একটি দৃশ্য, যেখানে দেখা গেছে- আতঙ্কের সময় ছাত্রদের পরম মমতায় আগলে রাখছেন একজন মাদরাসাশিক্ষক। ওই শিক্ষকের এই বীরত্ব ও মমত্ববোধের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সম্মননা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) তরুণ আলেমদের সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’ ওই শিক্ষককে এই সম্মাননা দিয়েছে। মূলত ভয়ের সময়েও শুধু নিজের কথা চিন্তা না করে; বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন আন্তরিক মায়া ও ভালোবাসা উদাহরণ সৃষ্টির কারণেই তাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
সম্মাননা পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার রাবা আইডিয়াল ক্রিয়েটিভ মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষক।
হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলামের কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েই ‘সাধারণ আলেম সমাজ’ তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়। এ সময় ‘সাধারণ আলেম সমাজ’র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সেলের সম্পাদক আকিফ আবদুল্লাহ। তার সাথে আরো ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাইফুল ইসলাম ও ফতোয়া সেলের সহ-সম্পাদক মুফতি নজরুল ইসলাম। তারা হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলামের এমন মানবিক ও দায়িত্বশীল কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে ‘সাধারণ আলেম সমাজ’র আহ্বায়ক মাওলানা রিদওয়ান হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে আলেমরা সবসময় অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে আসছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও তারা সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের যে কোনো দুর্যোগ-দুর্দশার সময় তাদের সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগ আমাদের আশার আলো দেখায়। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা আলেমদের সম্মাননা দেয়ার একটি ছোট উদ্যোগ আমরা শুরু করেছি। আমাদের সামর্থ্য সীমিত, কিন্তু এটাই আমাদের আন্তরিক সূচনা।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়। এ সময় রাবা আইডিয়াল ক্রিয়েটিভ মাদরাসার হিফজ শাখার সিসিটিভি ক্যামেরায় শিক্ষক হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলামের এই দায়ীত্বশীলতার চিত্র ফুটে ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম দরজার কাছেই একটি বিছানায় শুয়ে মোবাইলে কিছু করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে রুম থেকে বের না হয়ে উল্টো ছাত্রদের বিছানার দিকে ছুটে যান। দুই ছাত্রকে দুই খাট থেকে নামিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃশ্যটি ছড়িয়ে পড়তেই ওই শিক্ষক অসংখ্য মানুষের প্রশংসায় ভাসেন এবং সকলে তার জন্য দোয়া করেন ও কৃতজ্ঞতা জানান।



