জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পাঠ করান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
এতে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-নারী) আয়াশা সিদ্দিকা মেঘলাসহ নির্বাচিত অন্য সদস্য। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গত জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শপথ গ্রহণের পূর্বে নির্বাচনের পোলিং অ্যাজেন্টের দায়িত্ব পালন ও ভোট গণনা করতে এসে অকাল প্রয়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা’র স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার ছিল গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হারিয়ে গিয়েছিল, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মানে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি করা। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষুদ্র পরিসরে চেষ্টা করেছে সর্বোচ্চ দেয়ার।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকারের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে শিক্ষার্থীদের যে অধিকার জাকসু, তা যেন চলমান থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরাই সবকিছু, আমরা শুধু সহায়ক মাত্র।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসুর সদস্য সচিব এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘এই নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, যেখানে অনিয়মের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। সব ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। কেউ যদি এ নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তোলে, তা তাদের ব্যক্তিস্বার্থে করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষা সবার দায়িত্ব, ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। প্রশাসন, প্রার্থী, শিক্ষার্থী, পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতেও এর ধারা রক্ষা করতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান হানির বিরুদ্ধে সবাই একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ বি এম আজিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যগণ, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, শিক্ষক ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিভাবকগণ।
অনুষ্ঠান শেষে ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিকার বঞ্চিত ছিল। ক্যাম্পাসে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হয়েছে কিন্তু জাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ ছিল না। আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।’
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জাকসুর নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘শপথ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আমাদের উপর দায়িত্ব এসে পড়লো। আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করছি শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আগামী এক বছর শিক্ষার্থীদের অধিকারগুলো আদায় করে নিতে পারবো।’
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে ভিপি এবং বাকি শীর্ষ তিন পদসহ মোট ২৫ পদের ২০টিতে নির্বাচিত হন শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। বাকি ২ পদে বাগছাস ও ২ পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন।