দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেছেন, ‘সংবাদপত্র হলো সাধারণ মানুষের স্কুল। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে সব জানতে হয় ও সব বুঝতে হয়। সাংবাদিকের কাজ সত্য বলা—সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলা। শাসক সমাজ সংবাদ দেখলে ভীত হয় কারণ সংবাদপত্র সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এ স্তম্ভটি বাংলাদেশে মারাত্মকভাবে অবমানিত হয়েছে।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) প্রেস ক্লাবের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন হলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে আব্দুল হাই শিকদার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ভূমিকা নিয়ে বলেন, ‘সংবাদ হলো মানুষের খবর ও চিন্তার কালেকশন। আর পত্রিকা হলো সমাজের আয়না—সমাজের প্রকৃত দর্পণ।
তবে দুঃখজনকভাবে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রায় ৭০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিব—উভয়ের শাসনকালই ছিল বিভীষিকাময় ও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় ভরা সময়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্তব্য হলো—দেশকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়া। সেই পথ হলো গণতান্ত্রিক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।’
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। র্যালিটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কনভেনশন হলে গিয়ে শেষ হয়। পরে বেলা ১১টায় ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এস এম আব্দুল আওয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভিসি ড. মো: নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ ড. মো: শামীম আহমেদ ও নওগা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো: হাছানাত আলী।
অনুষ্ঠানে ভিসি আব্দুল আওয়াল তার বক্তব্যে বলেন, ‘নলেজ ইজ পাওয়ার। আমি দৃঢ়ভাবে এতে বিশ্বাস করি। আপনি যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, ততই আপনি নিজেকে, আপনার সমাজকে ও আপনার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের মধ্যে দল, মত বা চিন্তার ভিন্নতা থাকতে পারে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের প্রশ্নে ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার খবর তুলে ধরছেন। এটা প্রশংসনীয়। অনুরোধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিক, সাফল্য ও অর্জনগুলোকেও সামনে আনুন।‘
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক ছিলেন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সহ-সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রাজনীতি ও নির্বাচনবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: সাঈদুর রহমান।
সেমিনার শেষে ‘জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিকথা নিয়ে ‘বিপ্লবের দিনলিপি’ শিরোনামে একটি স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করা হয়, যা প্রেস ক্লাবের সদস্যরা যৌথভাবে প্রকাশ করেন। অতিথিরা স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনার প্রশংসা করেন এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণাধর্মী সাংবাদিকতা চর্চায় আরো উৎসাহী হওয়ার পরামর্শ দেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য, প্রেস ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।



