সাভারে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি, অবশেষে সমঝোতা

দুপুরে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসি’র মধ্যস্থতায় বৈঠক হলে ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জনান। অন্যদিকে ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেন সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)

Location :

Dhaka
১৬ যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
১৬ যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ |নয়া দিগন্ত

ঢাকা সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় সিটি ইউনিভার্সিটির ৬টি ছাত্র পরিবহনের বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ মোট ১৬টি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ভিসি, রেজিস্ট্রার ও প্রো-ভিসি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া ঘটনায় সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সোমবার (২৭ অক্টাবর) বিকেলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেন সিটি ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার নূরে আলম।

এর আগে রোববার রাত সাড়ে ৮টার থেকে সোমবার ভোর ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে আজ দুপুর ৩টার দিকে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসি’র মধ্যস্থতায় বৈঠক হলে ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জনান। অন্যদিকে ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেন সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। ফলে সুষ্ঠু মীমাংসার মাধ্যমে বৈঠক শেষ হয়।

পরে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ চার দিনের জন্য তাদের ক্যাম্পাস ছুটি ঘোষণা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলের সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে তা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রের গায়ে লাগে। এ নিয়ে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। পরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হন। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানায়। পরবর্তী সময়ে প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে শিক্ষার্থীরা ব্যাচেলর প্যারাডাইসের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে সিটি ইউনিভার্সিটির হামলাকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে ঘটনার জের ধরে রাত ১২টার দিকে পুনরায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সিটি ইউনির্ভাসিটির গেটে গিয়ে গেট বন্ধ পেয়ে বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ৬টি ছাত্র পরিবহনের বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬টি যানবাহনে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া ড্যাফডিলের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ভিসি অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, প্রো-ভিসি অফিস, অ্যাকাডেমিক ভবণসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন।

ঘটনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সংঘর্ষের সময় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলেও সাভার মডেল থানাসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে আসেননি।

সিটি ইউনিভার্সিটির পাশেই থাকা সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া ফাঁড়ি ইনচার্জ (এসআই) মো: আব্দুল ওহাব জানান, ঘটনার পরপরই রোববার রাত ৯টার সময় তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা আকরাইন মোড়ে অবস্থান নেন।’

এদিন সাভারের বিরুলিয়া এলাকার অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। ব্যাস্ততম আকরাইন এলাকার সড়কটি ছিল যানজট আর মানুষের মধ্যে ছিল আতঙ্ক।

ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থী আটক

ড্যাফোডিল ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রাতে ব্যাপক ভাঙচুরের সময় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে আটক করেন। পরবর্তী সময়ে সোমবার সকালে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠে তারা। বেলা ১১টার পর সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষ ড্যাফোডিলের ভিসিসহ তাদের কর্তৃপক্ষ না এলে ১১ শিক্ষার্থীকে ছাড়বে না বলে হুমকি দেয়। পরে বেলা ২টার দিকে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসি’র অ্যাডিশনার ডাইরেক্টর মো: সুলতান মাহমুদের মধ্যস্থতায় রুদ্ধদার বৈঠকে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ১১ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

একইসাথে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা প্রদানসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে বৈঠকটি বেলা ৩টার দিকে শেষ হয়।

সিটি ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের এক ছাত্রী জানান, আমরা রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাতে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা আমাদের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শেষ করে দিয়েছে। এ সময় বাউন্ডারি ওয়ালের ইট আমাদের মেয়েদের মাথায় পড়লে মেয়েরাও আহত হয়। এমন ভয়াবহ চিত্র আর কোনো দিন দেখিনি।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মুখপাত্র প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইউজিসি’র মধ্যস্থতায় বৈঠক শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আমাদের ১১ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে হস্তান্তর করলেও একজন শিক্ষার্থী আমাদের এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এ শিক্ষার্থী কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন আমরা এখনো নিশ্চিত না।

সিটি ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো: নূরে আলম নয়া দিগন্তকে জানান, এ ঘটনায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।