চাকসু নির্বাচনের আগমুহূর্তে বহিষ্কার, প্রচারণা শেষ, ভোট আগামীকাল

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
চাকসু ভবন
চাকসু ভবন |সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত পেরিয়ে শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। এখন প্রতীক্ষা ভোটের।

নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শেষ সময়ে এসে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

চবি ছাত্রদলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মামুন ছিলেন সংগঠনের অন্যতম ত্যাগী নেতা। চাকসু নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উপেক্ষা করা হলে তিনি কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেন বলে জানা গেছে। বহিষ্কারের ঘটনায় ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে।

এদিকে শেষ দিনে রেল স্টেশন থেকে ঝুপড়ি, ফ্যাকাল্টি ভবনসহ ক্যাম্পাসজুড়ে লিফলেট বিতরণে সরব ছিলেন প্রার্থীরা। ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও উপ-গ্রুপ বিভাজনের কারণে তাদের অবস্থান দুর্বল। বামপন্থী সংগঠনগুলো পৃথক প্যানেল দিলেও উপজাতীয় শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য নির্ভর প্যানেল থাকায় তারাও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।

অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল শিক্ষার্থী বান্ধব কর্মসূচির কারণে এগিয়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর তাদের সক্রিয়তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনায় এসেছে। ফলে বেশিভাগ ভোটার তাদেরকেই এগিয়ে রাখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিভাগ শিক্ষার্থী রাজনীতি সম্পৃক্ত না হলেও রাজনীতি সচেতন। তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সক্ষম প্রার্থীদেরকেই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল এবং প্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ডও চাকসু নির্বাচনে সীমিত প্রভাব ফেলবে বলে মত দিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

চবি ক্যাম্পাস থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। সাড়ে ২৭ হাজার ভোটারের মধ্যে তিন চতুর্থাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন। ফলে বাইরের ভোটাররাই ফলাফলের নিয়ামক শক্তি হিসেবে বিবেচিত। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল শাটল ট্রেন কেন্দ্রিক ও শহরের বাসা-মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ভোট কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনার ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানান, তারা চাকসু কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় ভোট দেবেন। সহায়তায় থাকবেন নির্বাচন কর্মকর্তাসহ দু’জন কমিশনার।

ভোটদানে সুবিধার্থে বাড়ানো হয়েছে শাটল ট্রেন ও বাসের সিডিউল। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়সূচিতে নগরীর নিউমার্কেট মোড়, ষোলশহর ও বটতলী রেলস্টেশন থেকে বাস ও ট্রেন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

এদিকে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য, বিভ্রান্তি ও সাইবার বুলিং মোকাবিলায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে।

জিএস প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।’

তারা নির্বাচনের দিন অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন, যাতে প্রশাসনের প্রতিনিধি ছাড়াও প্যানেলগুলোর মনোনীত সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় তিন যুগ পর সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন। ভোটগ্রহণ শেষে সেদিনই গণনা শুরু হবে।