বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ইতিহাসে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক স্মরণীয় অধ্যায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ থেকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা বুটেক্সের জন্য এ সমাবর্তন একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। দীর্ঘ ১৪ বছরের পথচলায় একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভিসি অধ্যাপক মো: মাসউদ আহমেদের সময় নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলেও চতুর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামানের সময়ে নির্ধারিত তারিখ বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবশেষে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জুলহাস উদ্দিনের নেতৃত্বে এ বহুল প্রত্যাশিত আয়োজন বাস্তব রূপ পেয়েছে। প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস ও আবেগ।
সমাবর্তন নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে একই বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত মো: সোহাগ বাবু বলেন, ‘বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন আমাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এটি বুটেক্স পরিবারের জন্য এক অবর্ণনীয় আনন্দের মুহূর্ত। ৩২ থেকে ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর গ্র্যাজুয়েটদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা অবশেষে সফল হতে চলেছে। কালো গাউন গায়ে চাপিয়ে, সমাবর্তন ক্যাপ আকাশে উড়িয়ে আবারো আমাদের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পারব, এ ভাবনাটাই আমাদের আবেগ আপ্লুত করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবর্তিত জাতীয় পরিস্থিতির মধ্যেও এত বড় ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বুটেক্সের এ সমাবর্তন আমাদের অ্যাকাডেমিক অগ্রযাত্রায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো: আমিরুল মোমেনিন বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটের জীবনে সমাবর্তন সবচেয়ে গর্বের মুহূর্তগুলোর একটি। এতদিন বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের জন্য এ সুযোগ অধরা ছিল, কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো সে স্বপ্ন বাস্তব হতে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে চেনা মুখগুলোর সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষাটা আর সহ্য হচ্ছে না। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুটেক্সেও প্রতি বছর নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন হোক, যেন ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের আর আমাদের মতো দীর্ঘ অপেক্ষা করতে না হয়।’
টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ফাহাদ জানান, বুটেক্সের ইতিহাসের প্রথম সমাবর্তনের অংশ হতে পারাটা তার জন্য অত্যন্ত আবেগের।
তিনি বলেন, ‘সমাবর্তন এমন একটি দিন, যার জন্য একজন শিক্ষার্থী পুরো শিক্ষাজীবন অপেক্ষা করে। এ দিনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির মর্যাদা সত্যিই অনন্য। নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে সহপাঠী, শিক্ষক ও সিনিয়রদের সাথে একই পোশাকে আবার মিলিত হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’
তবে প্রত্যাশার পাশাপাশি কিছু বাস্তব বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি প্রথম সমাবর্তন, তাই এর ব্যবস্থাপনা যেন নিখুঁত ও শিক্ষার্থী-বান্ধব হয়। গাউন, খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণে কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয় এবং পর্যাপ্ত মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়, এটাই প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ।’
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘এ সমাবর্তন কেবল সনদ বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি বুটেক্স পরিবারের দীর্ঘদিনের আবেগ ও অর্জনের স্বীকৃতি।’
৫০তম ব্যাচের আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী আমির হামজা বলেন, ‘প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সমাবর্তন আমাদের জন্য এক গর্বের অনুভূতি। দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় সিনিয়র ভাই-আপুদের যে আক্ষেপ ছিল, এ আয়োজন তার অবসান ঘটিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আশা করি সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হবে। প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা থাকবে সুশৃঙ্খল ও শিক্ষার্থী সুলভ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বুটেক্সের অ্যালামনাইদের আরো সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’
বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রথম সমাবর্তন যেন কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন না হয়ে বুটেক্স পরিবারের জন্য এক স্মরণীয় মিলনমেলায় পরিণত হয়, এটাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের অভিন্ন প্রত্যাশা।


