বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন লেভেল ও টার্মের সব পরীক্ষা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. এন এম গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন লেভেল ও টার্মের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের বৃহস্পতিবারের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন। বুধবার (২৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন সংগঠনটির সভাপতি মো: ওয়ালীউল্লাহ।
সংগঠনটির সভাপতি ওয়ালীউল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে বিকেল ৫টায় ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের কাউন্সিল হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
যমুনা অভিমুখে যাত্রায় পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ আমরা পুলিশের কাছে মার খেয়েছি। আমাদের ৫০ জনের অধিক প্রকৌশলী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। আমরা স্পষ্টভাবে আজ উপদেষ্টাদের কাছে এটা উত্থাপন করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ৩ দফা দাবির কোনোটাই পূরণ হয়নি। পলিসি মেকার যারা বসে আছেন তারা কেউ আমাদের আন্দোলনের বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানে না। এ সময় চার উপদেষ্টা ও ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত সদস্য যোগ দেবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত। বৃহস্পতিবার সব অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বুধবার সন্ধ্যার পর উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে বৈঠক করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এছাড়া আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে বুয়েট। বুধবার বুয়েটের রেজিস্ট্রার এন এম গোলাম জাকারিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।
বুধবার বুয়েটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উল্লিখিত দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
পুলিশের এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের বদলে পুলিশের এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বুয়েট প্রশাসন পুলিশের এ আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, মর্মাহত এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
যথাযথ তদন্ত করে হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে- বুয়েট প্রশাসন এমনটাই আশা করছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেয়া, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেয়া- এই তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার শাহবাগ অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ডেকে তারা সরে যান।
পরে বুধবার সকাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর দেড়টার দিকে তাদের দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলি টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী ও পুলিশ সদস্য আহত হন।