শিক্ষক সংকটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, নিয়োগে টালবাহানায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

বাকি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে পুনঃবিজ্ঞপ্তিতে কোনো বাধা নেই। তবে ইউজিসি থেকে নিয়োগের অনাপত্তিপত্র ছাড় পাওয়ার পরই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।

Location :

Barishal
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় |নয়া দিগন্ত

ববি প্রতিনিধি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) দীর্ঘদিন ধরে তীব্র শিক্ষক সংকট চললেও, এক বছরেরও বেশি সময় আগে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরও শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নানা টালবাহানার কারণে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৪ সালের মার্চ ও জুন মাসে দু’টি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক পদে মোট ৬০টি শূন্য পদের কথা জানায়। এর মধ্যে ৫১টি পদই ছিল প্রভাষক পদে।

তবে গত ৭ জুলাই মাত্র ১০টি প্রভাষক পদে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে প্রশাসন। ভিসি ও রেজিস্ট্রার দ্রুত বাকি পদগুলোতেও পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

অভ্যন্তরীণ আপগ্রেডেশনের সুবিধার্থে বৈষম্যমূলক নিয়োগের অভিযোগও উঠেছে। তুলনামূলক কম সংকট থাকা বিভাগগুলোতে তড়িঘড়ি করে ১০টি প্রভাষক পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকদের অধ্যাপক পদে উন্নীতকরণ।

একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, অধ্যাপক পদে উন্মুক্ত নিয়োগ দিলে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারেন। তাই কৌশল হিসেবে প্রভাষক পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে অধ্যাপক পদ ‘ব্লক’ করে অভ্যন্তরীণ উন্নীতকরণ নিশ্চিত করা হচ্ছে।

পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত বিভাগগুলো হলো- গণিত, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং, কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান। এর মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগ বাদে বাকি ছয়টি বিভাগেই অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

অন্যদিকে, সমাজকর্ম ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মতো একাধিক বিভাগে শিক্ষক সংকট চরমে পৌঁছেছে। এই দু’টি বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে সাতটি ব্যাচের ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষককে সাত-আটটি কোর্স পড়াতে হচ্ছে। নতুন ইউজিসি নীতিমালায় খণ্ডকালীন বা বাইরের কোর্স টিচার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাপ আরো বেড়েছে।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত জাহান বলেন, ‘মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে একটি বিভাগ পরিচালনা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভোগের। শিক্ষকের ঘাটতি আমাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী শুভব্রত মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকরা আমাদের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন না। আমরা চাই, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হোক।’

সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান আবু জিহাদ বলেন, ‘মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে একটি বিভাগ চালানো সম্ভব নয়। আমি নিজে একাধিকবার ভিসির সাথে কথা বলেছি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের জন্য।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলা ও মানবিক অনুষদের এক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বিভাগে ছয়জন শিক্ষক দিয়ে ছয়টি ব্যাচ পরিচালনা করতে গিয়ে শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা চাই, বাকি বিভাগগুলোতেও পুনঃবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হোক।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন বলেন, ‘বাকি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে পুনঃবিজ্ঞপ্তিতে কোনো বাধা নেই। তবে ইউজিসি থেকে নিয়োগের অনাপত্তিপত্র ছাড় পাওয়ার পরই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘যে অর্থবছরে পদ ছাড় করা হয়েছে, সে অর্থবছরে নিয়োগ না দেয়ায় ইউজিসি পদগুলো ব্লক করে দিয়েছে। এখন পদগুলো ছাড় করানোর জন্য চিঠি দেবো। অনুমোদন পেলে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাবো এবং পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’