মানছুর আলম অন্তর, কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দেখা না করায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এক কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে প্রকাশ্যে তাকে মারধর করেন ওই নেতা।
৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ওই কর্মচারীকে মারধর করা হয়।
অভিযুক্ত মেহেদী হাসান (সোহাগ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন এবং সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারী বলে জানা যায়। এদিকে ছাত্রত্ব শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষকের কর্মচারী পদে আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে এবং বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী সম্প্রতি প্রশাসনিকভাবে রেজিস্ট্রার দফতরে কার্যসহকারী পদে নিয়োগ পান। পরে ৩ জুলাই অফিসে যোগদান করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সকালে অভিযুক্ত মেহেদী ভুক্তভোগীকে কল দিয়ে ছাত্রদলের পরিচয় দেন এবং তার সাথে দেখা করার কথা বলেন। পরে ভুক্তভোগী দেখা করবেন বলে জানান। কিন্তু কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে দেখা করেননি তিনি। একইসাথে অভিযুক্ত ওই ছাত্রদল নেতার ফোন রিসিভ করেননি। পরে ওইদিন বিকেলে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে মেহেদী হাসান তাকে খোঁজে বের করেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেন ‘তুই কি আজাদ?’ পরে ভুক্তভোগী হ্যাঁ বলার সাথে সাথে প্রকাশ্যে তাকে মারধর শুরু করেন মেহেদী। এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো: আবুল বাশারও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভুক্তভোগীকে মারধর করে ভবন থেকে বের হয়ে যান মেহেদী। পরে অফিস শেষে বাড়িতে ফেরার সময় আবারো ক্যাম্পাস গেটের বাইরে তাকে আটকে রাখেন মেহেদী ও তার সহযোগীরা।
ঘটনায় ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবেদককে তিনি কিছু বলতে চান না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, বিএনপিপন্থী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভয়ে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।
এদিকে অভিযোগ ও মারধরের বিষয় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মেহেদী হাসান। ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে কল দিয়েছিলাম যেন তিনি আমার সাথে দেখা করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে কল ধরে আমাকে মিথ্যা বলেন এবং পরবর্তী সময়ে কল দিলে তাকে আর পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন। তাই আমার রাগ উঠে যায়। পরে রেজিস্ট্রার দফতরে তাকে খুঁজে পেয়ে রাগের মাথায় থাপ্পড় মারি।’
তবে কেন ওই কর্মচারী তার সাথে দেখা করবে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন ছাত্রদলের এ নেতা। ওই পদ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেনও হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে পরবর্তী সময়ে তার পছন্দের প্রার্থী চাকরি না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটান মেহেদী।
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদলের পাওয়ারে নিয়মিত প্রশাসনিক ভবনে বিভিন্নজনের চাকরির জন্য তদবির করছেন মেহেদী। এছাড়া ছাত্রদল ও এলাকার ক্ষমতা দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার কথা শুনে মামলা করে এ নিয়োগ আটকে দেয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। তখন আমরা বলেছি, এ সরকার তো বেশি দিন থাকবে না। পরে তিনি আর মামলা করেননি।
কর্মচারীকে মারধরের বিষয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমি জানতাম না। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আমরা সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নিব। এটি আমাদের আদর্শের সাথে যায় না। যথাযথ প্রমাণ পেলে আইনি পদক্ষেপ নিব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হোক কিংবা কর্মকর্তা কারো গায়ে হাত দেয়ার অধিকার কারো নেই। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। এমন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।’
ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এমন ঘটনা অপ্রত্যাশীত। তবে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি আমি প্রেসিডেন্টকে জানাব।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই ভুক্তভোগী আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’