পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন রাবি অধ্যাপক

রাবি অধ্যাপক আ আল মামুন হল সংসদের নারী নেত্রীদের পোশাক ও মদ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রকাশ করেছেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা তার মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রশাসনের কাছে স্মারক লিপি প্রদান করেন।

রাবি প্রতিনিধি

Location :

Rajshahi
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ আল মামুন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ আল মামুন। |নয়া দিগন্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল সংসদের নারী নেত্রীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি তার ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ ক্ষমা চেয়েছেন। এর আগে, তিনি রাবি হল সংসদের নারী নেত্রীদের ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে টু-কোয়াটার প্যান্ট ও মতের বোতল নিয়ে ক্লাসে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।

ক্ষমা চাওয়ার পোস্টে তিনি লেখেন, আমি এক এগারোর সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করে জেল খেটেছি। ২০১৩ সাল থেকে নানাভাবে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে জুলুম-অত্যাচারের ক্রিটিক করেছি ২০২৪ পর্যন্ত, ফেসবুকে ও বইপত্রে। সে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। শিক্ষক হিসেবে আন্দোলনকারীদের আগলে রেখেছিলাম। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনমুহূর্তে স্বপ্ন দেখেছিলাম সম্পূর্ণ নতুন এক বাংলাদেশের। কিন্তু এরপরে বহু ঘটনা ঘটেছে, যেমন চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ সেদিকে হাঁটেনি। ব্যাপক হতাশা কাজ করে আমার মধ্যে।

তিনি আরো লিখেছেন, হতাশাগ্রস্ত আমি ঝোঁকের বশে এমন কিছু লিখি যা লেখা উচিত হয়নি। তা আমি লিখতে চাইওনি। মিস রিডিং হবে বুঝতে পেরে সাথে সাথে আমি পোস্টটি সরিয়ে নিই। পোশাক বিষয়ে আমার ভাবনা পরিষ্কার- পোশাকের কারণে আমি কাউকে বড় বা ছোট করে দেখি না। ‘হিজাব’ ডিফেন্ড করার মতো অনেক পোস্ট পাবেন আমার। এ শিক্ষা আমার ‘সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধ’র ক্রিটিক করতে গিয়েই হয়েছে। ফলে আপনারা যা ভাবছেন, সে রকম কোনো উপহাস বা তাচ্ছিল্য আমি করি না। এক মুহূর্তে পোস্ট করে পারসোনালাইজ করেছিলাম, এ নিয়ে আরো ভাবনা-চিন্তা করার জন্য। কিন্তু সে মুহূর্তেই কেউ এ পোস্ট স্ক্রিনশট নিয়ে ছড়িয়ে দেয়। খেয়াল করলে দেখবেন, ওই পোস্টে কোনো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার কিছু নেই, কোনো ইন্টারএকশন নেই! তারপরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, আমি দুঃখিত। আমি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা করি। আশা করি, বিভ্রান্তিকর উত্তেজনা এবার প্রশমিত হবে। আমি চাই না, আমাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হোক বা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কলহে জড়াক! শুভকামনা সবার জন্য।

এর আগে অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুকে রাবির হল সংসদের নারীদের শপথ গ্রহণের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’

এদিকে এ ঘটনায় গতকাল মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে কঠোর সমালোচনা। তার বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছেন রাকসুর প্রতিনিধিরা। এর আগে গতকাল রাত ১১টায় তার মন্তব্যের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার কথা জানান তারা।