জাবির সিনেটে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট পাস, বরাদ্দ কমেছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে

শনিবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আতাউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাবির সিনেটে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে
জাবির সিনেটে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে |নয়া দিগন্ত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মূল বাজেট এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট পাস করা হয়েছে। মূল বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৩৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ০.১৪ শতাংশ।

শনিবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট ও ২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেতন-ভাতা বাবদ সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫৬.২৪ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে- ৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ খাতে মোট বাজেটের ২৩.৩১ শতাংশ খরচ হবে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দে ছিল ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা- ২২.৬০ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে। এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ, যা মোট বরাদ্দের ১১.৯৯ শতাংশ। চলতি বছর এ খাতে ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা অর্থাৎ ১০.০২ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।

গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২.৮৫ শতাংশ। চলতি বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ- মোট বরাদ্দের ২.২৬ শতাংশ। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা খাতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ০.১৪ শতাংশ। এটি চলতি বছর ছিল ৪৫ লাখ টাকা- ০.১৫ শতাংশ। যানবাহন ক্রয় বাবদ প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বাজেটের ০.৭১ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া ফিস বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস থেকে আয় ১০ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে মোট নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।

বাজেট পর্যালোচনায় আরো দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতের বরাদ্দ ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাজেটে যানবাহন ক্রয় খাত থেকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি এসি কোস্টার ও একটি বড় বাস ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য এক কোটি টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বৈদ্যুতিক লাইনগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য বাজেটে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিটি (আরএফআইডি) স্থাপন বাবদ সংশোধিত বাজেটে এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট উপস্থাপনকালে কোষাধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) আনুমানিক ঘাটতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা হওয়ায় বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতির কারণ হিসেবে কোষাধ্যক্ষ উল্লেখ করেন, সরকারি বিধিবহির্ভূতভাবে কিছু কিছু খাতে যেমন- জাবি স্কুল ও কলেজের ব্যয়, গবেষণা ভাতা, নৈশ ভাতা, গার্ড বোনাস, স্বাস্থ্য বিমা/গোষ্ঠী বিমা খাতের ভর্তুকি, ডাইনিং হল, অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি খাতসমূহে ব্যয় করাই বাজেট ঘাটতির প্রধান কারণ। এসব খাতে চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরের জন্য ইউজিসি থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ছাড়া গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, গাড়ি ভাড়া, রোড ট্যাক্স ইত্যাদি বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও জাবি স্কুল ও কলেজের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই দুটি খাত আমাদের বাজেট ঘাটতি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। এর বিপরীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো খাত নেই।’