তীব্র শিক্ষক সংকটে জাককানইবি'তে টালমাটাল শিক্ষা-কার্যক্রম

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২০ জন শিক্ষকের মধ্যে অনেকে শিক্ষাছুটিতে থাকায় প্রকৃত শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। অথচ আদর্শ অনুপাতে দরকার ছিল অন্তত ৫৪০ জন শিক্ষক।

এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

Location :

Mymensingh

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে তীব্র শিক্ষক সংকট। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের ডায়েরি অনুযায়ী ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত (২০২৪-২৫ সেশন বাদে)। আদর্শ অনুপাতে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য চাই একজন শিক্ষক—অর্থাৎ প্রয়োজন ছিল অন্তত ৫৪০ জন সক্রিয় শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে আছেন মাত্র ২২০ জন, যাদের অনেকেই শিক্ষাছুটিতে—ফলে বাস্তবে শিক্ষক সংখ্যা আরও কম।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চাইছে ‘আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই)’ বাস্তবায়ন, যেখানে প্রতিটি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠদান, থিসিস, গবেষণা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রয়োজন ৩০-৩২ জন সক্রিয় শিক্ষক। থিসিস না থাকলেও ওবিই ছাড়াও বর্তমান সিলেবাস অনুসরণ করতে গেলেও প্রয়োজন পড়ে অন্তত ১৫-১৬ জন শিক্ষক।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২০ জন শিক্ষকের মধ্যে অনেকে শিক্ষাছুটিতে থাকায় প্রকৃত শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। অথচ আদর্শ অনুপাতে দরকার ছিল অন্তত ৫৪০ জন শিক্ষক। কিন্তু বাস্তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৩ থেকে ৫ জন।

বর্তমানে-

➤ সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষক আছেন ৬ জন (পাঠদান করাচ্ছেন ৪ জন)

➤ ইতিহাস বিভাগে ৩ জন (অনুমোদিত)

➤ মার্কেটিং-এ ৪ জন

➤ ব্যবস্থাপনায় ৩ জন (পাঠদান করাচ্ছেন ২ জন)

➤ দর্শনে ৫ জন (পাঠদান করাচ্ছেন ৪ জন)

➤ পরিসংখ্যানে ৪ জন (পাঠদান করাচ্ছেন ৩ জন)

➤ নৃবিজ্ঞানে ৮ জন (পাঠদান করাচ্ছেন ৪ জন)

➤ পপুলেশন সায়েন্সে ৮ (পাঠদান করাচ্ছেন ৪ জন)

➤ ফিল্ম-মিডিয়া ৭ জন (পাঠদান করাচ্ছে ৫ জন)

ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন,"একাডেমিক গুণগত মান রক্ষায় শিক্ষক সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিভাগের পাঠদানে গুণগত মান ধরে রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ অপরিহার্য। বর্তমানে যে শিক্ষক সংখ্যা আছে, তা সবগুলো ব্যাচের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিভাগীয় অগ্রগতি ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অবিলম্বে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাই আমরা।"

ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, "আমার বিভাগসহ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিভাগের মধ্যে শিক্ষকের প্রবল সংকট রয়েছে। একজন শিক্ষককে একাধারে ক্লাস পরিচালনা, পাঠ্যক্রমের প্রস্তুতি, খাতা দেখা, প্রশ্ন তৈরি, মানসম্মত প্রবন্ধ প্রকাশ করা, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন মিটিং এবং এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মতো নানা দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় জনবল যদি বিভাগে না থাকে তাহলে যেমন শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়, একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) প্রস্তাবিত আউটকাম বেসড এডুকেশন (OBE) বাস্তবায়ন করাও খুবই কষ্টসাধ্য। তাই, মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে এবং বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য অবিলম্বে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও জনবল নিয়োগ সময়ের অপরিহার্য দাবি বলে মনে করছি।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ডিপার্টমেন্ট শিক্ষক সংকটে আছে। তাদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করতে গিয়ে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষকের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এবিষয়ে ইউজিসিতে বেশ কয়েকবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইউজিসি বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও এখনো অগ্রগতি হয় নাই। তাদের অনুমোদন ছাড়া তো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।