প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ক্লাস রুম এবং ল্যাব রুম সংকটের অবসান ঘটছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ তলা দুইটি অ্যাকাডেমিক ভবন খুলে দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিনের এই সংকটে অবসান ঘটলো। চলতি সপ্তাহ থেকে পুরাদমে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করেছে বিভাগগুলো। এ নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয় সরকারি টিসার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ভবনে। এরপর এটি চলে যায় শহরের মহিষের ডিপোর একটি বাসা ভাড়ায়। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি হলে সেখানে বিভাগগুলো চলে আসে। তখন বিভাগ ছিল মাত্র ১০টি। ২০১৪ সালে নতুন ভিসি আসার দুই বছরের ব্যবধানে কোনো অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি না করে অপরিকল্পিতভাবে আরো ১০টি বিভাগ খোলা হয়। তখন থেকে তৈরি হয় ক্লাস রুম এবং ল্যাব রুমের চরম সংকট। উপায়ন্তু না দেখে ২০১৬ সালে ছাত্রী হলের পাশে তৈরি করা হয় টিনশেডের মহুয়া ভবন। সেখানে বর্ষার সময় ক্লাসে বৃষ্টির পানি, সাপ-জোঁকের ভয়, গ্রীষ্মে প্রচন্ড গরম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোনো উপায় নেই। নেই ক্লাস রুম, নেই ল্যাব রুম। কয়েকটা বিভাগ মিলে ব্যবহার করেন একটা ল্যাব। এক বিভাগ ল্যাব শুরু করলে আরেক বিভাগ ল্যাবে জায়গা পায় না। ব্যাচ ৬টা ক্লাস রুম ১টা, এক ব্যাচ ক্লাস করলে আরেক ব্যাচ দাঁড়িয়ে থাকেন। কখনো শিক্ষক ক্লাস বাতিল করে দেন। বিভাগগুলোতে নেই কোনো সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই।
ক্লাস, ল্যাব রুমের এই তীব্র সংকট কাটানোর জন্য ২০১৮ সালের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এ পাশ হওয়া ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্পে নেয়া ২টি ১২তলা অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি কাজ। সেই কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। এর মধ্যে ইউ শেপ আকৃতির ভবনটি তৈরির জন্য ৭৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আরডিডিপি মূল্য এবং আই শেপ আকৃতির ভবনের জন্য ৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকার আরডিডিপি মূল্য ধরা হয়। ছয় বার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে সম্পন্ন করা হয় ভবন দুটি নির্মাণের কাজ। গত বছরের আগস্টে পটপরিবর্তনের পর ভবন দুটি বুঝে নিতে সময় নেন নতুন প্রশাসন। ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় ভবন দুটির অ্যাসেসমেন্টের কাজ। এরপর গত সপ্তাহে বিভাগগুলোর জন্য ভবন দুটি খুলে দেয়া হয়।
নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন দুটি খোলা নিয়ে আনন্দিত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র জহিরুল ইসলাম রিফাত বলেন, ‘ক্লাস, ল্যাব রুম পর্যাপ্ত না থাকাতে এতদিন কিছুই হতো না। অবশেষে সেই সংকট কাটলো। এটা নিয়ে আমরা আসলেই আনন্দিত।’
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, ‘আমাদের ১টা ক্লাস রুম আর ১টা অফিস রুম ছিল মাত্র। ল্যাব রুমের প্রয়োজন থাকলেও সেটা ছিল না, শিক্ষকদের বসার জায়গা ছিল না। সেই সংকট এখন কেটে গেছে। আগামী দিনে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এস এম আবদুল আওয়াল বলেন, ‘আমরা আসার পরে চেষ্টা করেছি দ্রুত অ্যাকাডেমিক ভবন দুটি খুলে দিতে। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। অবশেষে ভবন দুটি আমরা খুলে দিতে পেরেছি, এতে আমরা খুশি। আশা করি বিভাগগুলো এবার তাদের মতো করে এগিয়ে যেতে পারবে।’