বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সুবিধাবঞ্চিত ১২০ জন এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নাহার-অরফান আপলিফ্টমেন্ট স্কলারশিপ’ প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং ৩-এর এমআইএস গ্যালারি রুমে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। ইউনিভার্সাল হিউম্যানিটিজ হাব (ইউএইচএইচ) এ স্কলারশিপের আয়োজন করেছে।
সুমাইয়া খান অনামিকার সঞ্চালনায় ইউএইচএইচ সভাপতি মো: মুজাহিদুল ইসলাম সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সিনিয়র অধ্যাপক ড. মো: শওকত আলী।
এ উদ্যোগের প্রশংসা করে ড. মো: শওকত আলী বলেন, ‘এ ধরনের ইউনিক সাপোর্ট শিক্ষা সবার জন্য সমান সুযোগ নিয়ে আসে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী তাদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশে নয় গোটা বিশ্বে প্রস্তুত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সাল হিউম্যানিটিজ হাব (ইউএইচএইচ)-এর প্রেসিডেন্ট মো: মুজাহিদুল ইসলাম, যিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক। তিনি তার বক্তব্যে স্কলারশিপের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে আমরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যাতে তারা কোনো আর্থিক সঙ্কটের কারণে তাদের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকে ১১০ জনের মাঝে এককালীন বৃত্তি দিচ্ছি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এইটার গুরুত্ব অনেক। যাদের বাবা-মা নেই তারা বুঝে পৃথিবীটা কত কঠিন। বাবা-মা না থাকার অভাব কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়।’
রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা ক্যারিয়ারে ফোকাসড হন। অনার্স চতুর্থ বর্ষে আসার আগেই আপনারা কি হতে চান সেটি ফিক্সট করে এগিয়ে যান। আপনারা সফল হবেন আশা রাখি।’
বেরোবি প্রক্টর ড. মো: ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই এতিম নবীর এতিম উম্মত। ৬ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা মারা গেছেন সেই দিক থেকে আমিও এতিম। আমাদের সমস্যা হলো অমরা ভবিষ্যতে কে কী করব সেটা ঠিক করে রাখি না। আমাদের উচিত লক্ষ্য ঠিক করে সেটির জন্য কাজ করা।’
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আজকে যে এখানে এজন্য সব থেকে বেশি অবদান অমার মায়ের। আমার মা আমাকে সর্বপ্রথম ৫০ টাকা দিয়ে স্কুল ভর্তি করে। আমার পড়াশোনার পেছনে এই ধরনের বৃত্তিগুলো না থাকলে আমার জন্য পড়াশোনা করা খুবই কষ্ট হয়ে যেত। আমি যদি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করি তাহলে কোনো দিন অন্যায় করব না, একজন ভালো মানুষ হতে চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী হুচনেরা খাতুন বলেন, ‘আমি বাবা ডাক কখনো ডাকিনি, বাবাকে কখনো দেখিনি। আমি যদি আজকের এই বৃত্তি না পেতাম তাহলে আমার ডিপার্টমেন্ট-এর একটি প্রোগ্রামের কাজ করতে পারতাম না। অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা নাহারকে, আমাকে এ সহযোগিতা করার জন্য।’
ওই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো: হারুন-অর রশিদ, প্রক্টর ড. মো: ফেরদৌস রহমান, ছাত্র পরামর্শ ও উপদেষ্টা পরিচালক প্রফেসর ড. ইলিয়াস প্রামাণিক, সহকারী প্রক্টর ড. আবদুল্লাহ আল মাহাবুব, রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের, প্রভাষক নিয়াজ মাখদুম, সাইফুল ইসলাম সজীব, আফজাল হোসেন শাকিল ও এ এম মুবাশ্বির শাহ্সহ শতাধিক বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী।