জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং গণঅভ্যুত্থানের দেড় বছর পর শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’র নাম পরিবর্তন করে ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক হল’ করা হয়েছে। এদিকে মুজিব হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও সাবেক জাবি শিক্ষার্থী মুসফিক উস সালেহীন। পরে এনসিপি এ নেতার মায়াকান্না ফেসবুক পোস্টে তুলোধুনো করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে দেয়া একটি পোস্টে এ নিন্দা জানান।
জানা যায়, মুশফিক উস সালেহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তনের নিন্দা জানাই। কেউ না কেউ কথাটা বলবে ভেবেছিলাম, কিন্তু সবাই চুপ। শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ১০ নম্বর হল বলা হচ্ছিল অনেক দিন ধরে। এখন সেটির নাম শেরে বাংলা রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা, শেখ রাসেল ও বঙ্গমাতা হলের নাম পরিবর্তন প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বদলের প্রয়োজন বুঝলাম না।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘শেখ মুজিবকে দেবতা বানানোর পক্ষে নই, আবার তাকে অস্বীকার করার পক্ষেও নই। স্বাধীনতা সংগ্রামে তার নেতৃত্বকে মুছে ফেলা যাবে না। দেশের বড় অংশের মানুষ, এমনকি যারা আওয়ামী লীগ পছন্দ করেন না— তারাও তাকে শ্রদ্ধা করে। ইতিহাস থেকে তাকে সরানো সম্ভব নয়।’
মুশফিক জানান, ‘এ নাম পরিবর্তন অকারণে রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে।’
তার মতে, ‘এটি ঠিক আওয়ামী লীগ আমলে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদলে শাহজালাল রাখার মতো ঘটনা। অতীত নিয়ে টানাহেঁচড়া না করে প্রশাসনের উচিত ছিল ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নেয়া।’
এদিকে তার পোস্টের কমেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায়।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র জিয়াউল হক কমেন্টে লেখেন, ‘ইতিহাস দিয়ে মুজিবপূজা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন সত্য সামনে এলেও অনেকের মানতে কষ্ট হয়। মুজিব চেতনা মানুষ আর খায় না! কমেন্টগুলো পড়লে আপনারও লজ্জা লাগার কথা।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির এক পলিটিক্যাল কাউন্সিল সদস্য জানান, ‘মুশফিকের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক ছিল, দিন দিন তার আওয়ামী প্রীতি প্রকাশ পাচ্ছে, দলের অনেকে তাকে ইদানীং এনসিপিতে আওয়ামী লীগের গুপ্তচর বা অ্যাজেন্সির লোক হিসেবে মনে করছে।’
এনসিপির বেশ কয়েকজন নেতা নাম না প্রকাশ করে বলেন, ‘মুশফিক সুশীলতার মোড়কে মূলত ভিন্ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এটা ভারতীয় অ্যাজেন্ডা মনে হচ্ছে। তাছাড়া জুলাই আন্দোলনেরও তার তেমন কোনো ভূমিকা আমাদের চোখে পড়েনি।’
উল্লেখ্য, নাম পরিবর্তিত অন্য তিনটি হল হলো- শেখ রাসেল হলের নতুন নাম ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’, ‘শেখ হাসিনা’ হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ নামে ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ‘ফেলানি খাতুন’ হল নামে নামকরণ করা হয়েছে।



