ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ পুকুরে ভেসে ওঠার পর থেকে তার মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার লাশ উদ্ধারের আগের দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে সাজিদকে। এ সময় লাশ উদ্ধারের সময়ের পোশাকেই ছিলেন তিনি। এছাড়া সর্বশেষ সেদিন বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে এক শিক্ষার্থীর সাথে কথাও বলেন তিনি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলেও তার ফোনে কল করা হলে কয়েকবার ফোন রিসিভ হয়। এদিকে লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের ফোনটি তার কক্ষ থেকে পাওয়ার দাবি করেছেন তার বন্ধু।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশটি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
সাজিদের পাশের রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, লাশ উদ্ধারের আগের দিন (বুধবার) বিকেল ৩টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজতে বের হন সাজিদ। এরপর বৃষ্টির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে ফুটবল খেলতে দেখা যায় তাকে। এসময় সাথে থাকা অন্য খেলোয়াড়রা জানান, প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন তারা। খেলার সময় সাজিদের পরনে যে পোশাক ছিলো সেই পোশাকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে একই পোশাকে ফুটবল খেলার পর তাকে জিয়া মোড়ে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও জিয়া মোড়ের দোকানী আব্দুল আলীম। এসময় তার শরীর বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় ছিলো। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি সাজিদের।
এদিকে বুধবার রাত ১১টার দিকে পুকুর ঘাটে এক জোড়া কালো জুতা দেখেন সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। লাশ উদ্ধারের সময়ও সেখান থেকে সেই জুতা জব্দ করা হয়। এসময় সেগুলো সাজিদের জুতা বলে নিশ্চিত করেন তার বন্ধুরা।
এদিকে বুধবার বিকেলের পর সাজিদকে আর তার কক্ষে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন তার পাশের কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিকে সেদিন তার রুমমেটরা কেউ হলে ছিলেন না বলে জানা গেছে।
এদিকে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সাজিদের ফোনে কল দেয়া হলে তার কয়েকজন বন্ধুর কল রিসিভ হয় বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। তবে অন্য পাশ থেকে কোনো কথা আসেনি। পরে সাজিদের লাশ উদ্ধারের পর তার কক্ষ থেকে সেই ফোন উদ্ধারের দাবি করেছেন তার বন্ধু ইনসান।
তিনি বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর সাজিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য আমার এক জুনিয়রের মাধ্যমে তার কক্ষ থেকে ফোনটি নিয়ে আসি।’ তবে লাশ উদ্ধারের আগে কিভাবে ফোন রিসিভ হলো তা নিয়ে চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ময়নাতদন্তের আনুমানিক ৩০ ঘণ্টা আগে সাজিদ মৃত্যুবরণ করেছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। ময়নাতদন্ত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লাশের সংরক্ষিত অঙ্গের রাসায়নিক বা বিষতাত্বিক পরীক্ষার ফলাফল (ভিসেরা রিপোর্ট) আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে ৪টার দিকে সাজিদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় সম্পর্কে জানার পর একে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিকেল ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। দাবিগুলো হলো- পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো, বিশ্ববিদ্যালয় বাদি হয়ে মামলা করা, ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, ক্যাম্পাসের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে প্রশাসনের ক্ষমা চাওয়া এবং ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুততম সময়ে প্রদানের তাগিদ দেয়া। এ সময় দাবি না মানলে ক্যাম্পাস কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া আগামীকাল আবারো অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তদন্তের অগ্রগতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে এবং প্রো-ভিসির সাথে বসার জন্য বললেও তারা সাড়া দেয়নি।’
ভিসির রুটিন দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, ‘অতি দ্রুত সঠিক কারণ উদঘাটন করতে পারবো বলে আশা করি। যেহেতু তার বাবা একটি মামলা করেছে। তাই এ বিষয়ে পুনরায় মামলার পরিকল্পনা নেই। আমরা তার পরিবারের করা মামলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। অন্য বিষয়গুলো নিয়েও আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’