প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৮ বছর পেরোলেও এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্রসংসদ নির্বাচন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ দাবিটি আরো জোরালো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পাবিপ্রবি আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো ধারা নেই। ফলে নির্বাচন আয়োজন করতে হলে প্রথমে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন নিতে হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলরের অনুমোদনের মাধ্যমে আইনে তা অন্তর্ভুক্ত হলে তবেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে।
ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রভাব ছিল প্রবল। তাদের হাতে নির্যাতন, হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন বহু শিক্ষার্থী। বিশেষ করে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে কখনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর ১৩ আগস্ট সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তবে শিক্ষার্থীদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ মোজাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হবে।’
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। এজন্য হলেও সংসদ গঠন জরুরি।’
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী রতন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাচ, বিভাগ ও হল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত সংসদ শিক্ষার্থীদের সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে পারে। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়া ছাড়াই ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম আবদুল আওয়াল বলেন, ‘ঢাবি, রাবি বা জাবির মতো পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইনে সংসদ না থাকায় বিষয়টি আরো জটিল। সংসদ চালু হলে ছাত্র রাজনীতিও স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসবে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’