বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের পালাবদল- এই বিষয়টি এখন ঢাকার রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দফতরের একাধিক মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন মোড়ও অনেকটাই দৃশ্যমান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন এই সম্পর্কে বাণিজ্য, কূটনৈতিক দিক থেকে দেশ দু’টির কার কতটা লাভ হবে?
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা বা একাত্তর প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে এই সম্পর্ক কতটা টেকসই বা স্থায়ী হবে, সেই আলোচনাও সামনে এসেছে।
কূটনীতি নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের সাথে দেশের সম্পর্ক কখনো প্রয়োজন অনুযায়ী হয়ে থাকে, আবার কখনো সেই সম্পর্ক হয় আস্থা বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেহেতু অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে, সেকারণে দু’দেশ এখনো আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ কতটা আস্থায় নিচ্ছে, সেটি একটি বিষয়।
ফলে এখন সম্পর্ক তৈরির দু’দেশের চেষ্টার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়নি দেশের মানুষের মনোভাব।
বরং এর পেছনে দু’পক্ষেরই রাজনৈতিক চিন্তাও থাকতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তাদের মতে, অতীতকে অমীমাংসিত রেখে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে গেলে বারবার হোঁচট খেতে হয়।
এখানে উদাহরণ হিসেবে বিশ্লেষকদের অনেকে সম্প্রতি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরে আমীমাংসিত বিষয়ে তার বক্তব্যকে টেনে আনছেন। সেই সফরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, গণহত্যাসহ একাত্তর প্রশ্নে এর আগে দু’দফায় মীমাংসা হয়েছে।
তার এ দাবির সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে; রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশও পাকিস্তানের ওই বক্তব্যের সাথে একমত নয় বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন।
এখন দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটও বেশ গুরুত্ব বহন করে। দেখা যায়, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে ভারতের সাথে সম্পর্ক যেমন খুবই ঘনিষ্ঠ হয়েছিল, তেমনি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
তাদের ধারণা, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে।
তবে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। এর সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো অংশীজনেরও আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের এমন অবস্থানের পেছনে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির কোনো চিন্তা থাকতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
যদিও সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, এ অঞ্চলে সব দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরির নীতি নিয়ে সরকার এগোচ্ছে।
কেন এত আলোচনায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান- দু’দেশের দিক থেকে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতাও বেড়েছে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয় সামনে এসেছে।
এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সম্প্রতি পর পর পাকিস্তানের দু’জন মন্ত্রীর ঢাকা সফর। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ঢাকায় আসেন, সেই সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই সফরে আসেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
ইসহাক দারের বেশ কিছু মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। তিনি দাবি করেন, গণহত্যাসহ ৭১ প্রশ্নে দু’দফা সমাধান হয়েছে। এছাড়াও ইসলাম ধর্মের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে ‘উদার’ হয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে বলেছেন যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ওই সফরের সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তিনটি দল অর্থাৎ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সাথে পৃথক বৈঠক করেছেন। এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
ভূ-রাজনীতির গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ইসহাক দার বাছাই করা দুই-তিনটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে গেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেননি, কথা বলেননি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে।
নতুন করে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে পাকিস্তান আসলে কী চায়, সেটাও স্পষ্ট করা হয়নি। আর যেহেতু অমীমাংসিত ইস্যুগুলোয় কোনো সমাধান আসেনি, সে কারণে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করেন আলতাফ পারভেজ।
পাকিস্তানের আগ্রহের কারণ কী
নতুন সর্ম্পক তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহ দেখা যায়। তবে পাকিস্তানের আগ্রহ বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে যেহেতু লম্বা সময় বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক টিকে ছিল শুধু কূটনৈতিক দিক থেকে। দু’দেশের মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ছিল।
ফলে এখন পরিস্থিতিটাকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক তৈরির সময় ও সুযোগ হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনীতিতে ভারতকে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় পাকিস্তান বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো কৌশল নিয়ে থাকতে পারে।
সেজন্য পাকিস্তান বেশি আগ্রহী বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পর বাংলাদেশে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট, ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দেশে বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো কোনো দলের বা অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো অংশীজনের পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কে আগ্রহ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির মনে করেন, এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের খানিকটা কৌশলগত বিষয় আছে।
তবে তিনি বলেন, ‘ডাকঢোল পিটিয়ে রাজনৈতিক ভাবনা থেকে কোনো সম্পর্ক তৈরি করা হলে তার টেকসই বা স্থায়ীত্বের প্রশ্নে সন্দেহ থাকে। কারণ ৭১ প্রশ্নে মীমাংসা না হলে বাংলাদেশের মানুষ আস্থায় নেবে না।’
‘আর আস্থা না থাকলে সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয় না’- বলেও উল্লেখ করেন সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত।
কেন আস্থার সঙ্কট
বাংলাদেশের সাথে অমীমাংসিত ইস্যুতে অতীতে দু’দফায় সমাধান হয়েছে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের এই দাবির প্রথম ভিত্তি হলো ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।
এই চুক্তি হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল। এর আগে ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ওই চুক্তির মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বন্দী পাকিস্তানের ১৯৫ জন সৈনিককে ফেরত নেয়ার বিষয়। এর সাথে ছিল পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফেরত আনা।
ভূ-রাজনীতির গবেষক আলতাফ পারভেজ বলছেন, সেই চুক্তিতে দায়দেনার মীমাংসার বিষয়ে কিছু ছিল না। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে ওই ১৯৫ জন সৈনিককে ক্ষমা করা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রশ্নে ক্ষমা করা হয়নি।
ফলে সেই চুক্তিকে ভিত্তি করে মীমাংসা হওয়ার কথা বলা যায় না বলে উল্লেখ করেন আলতাফ পারভেজ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির ক্ষেত্রে পারভেজ মুশাররফের অনুশোচনার বিষয়ও আরেকটি ভিত্তি হিসেবে এসেছে।
২০০২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ঢাকা সফরে এসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। সেই সফরে জেনারেল মুশাররফ বিবৃতিতে বলেছিলেন, যদি একাত্তরে ‘এক্সেস’ বা ‘বাড়াবাড়ি’ হয়ে থাকে, সে জন্য তিনি ‘রিগ্রেট’ বা অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।
আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘যদি’ শব্দটা ব্যবহার করে বিষয়টা আনা হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ এক ধরনের অপমানজনক বলে মনে করে।
এছাড়া অনুশোচনা প্রকাশ করা এবং আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে।
যদিও পাকিস্তানের কোনো কোনো নেতা এভাবে বিভিন্ন সময় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারা গণহত্যার কথা স্বীকার করেননি, রাষ্ট্রীয়ভাবেও কখনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি।
আর সে কারণে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মীমাংসার দাবি বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এবং এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।
নতুন সম্পর্ক, কার লাভ কতটা
বাংলাদেশ-পাকিস্তান- দু’দেশ তাদের এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলছে। সেই লক্ষ্য থেকে ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চাল কিনছে পাকিস্তানের কাছ থেকে।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই দু’দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে একে অপরের জন্য সেভাবে অবদান রাখার সুযোগ নেই।
ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলছিলেন, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। ফলে অর্থনীতি বা বাণিজ্যে দু’দেশের কারো সেভাবে লাভ হবে না।
একটিমাত্র খাতে টেক্সটাইলে পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে। সেক্ষেত্রেও পাকিস্তান যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তাহলে তা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দু’দেশের মানুষের মধ্যে যদি আস্থার ও স্থায়ী সম্পর্ক না থাকে, সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় সম্পর্ক করা হলে তারা একে অপরের জন্য বিনিয়োগে সেভাবে এগিয়ে আসবে না।
মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, এখন সম্পর্কের যে উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে অর্থনীতি ও বাণিজ্যের দিক থেকে এগোনোর কথা বলা হচ্ছে। শেষপর্যন্ত তা কতটা টেকসই হবে, সেই প্রশ্ন থেকে যায়।
এছাড়া বিশ্লেষকেরা মনে করেন, গণহত্যাসহ একাত্তরের প্রশ্নে মীমাংসা না করে বাংলাদেশের কোনো কোনো পক্ষের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে। সেটাকে দু’দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বলা যাবে না।
মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে পাকিস্তানের সাথে প্রতিটি বৈঠকে একাত্তর প্রশ্নে অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনায় এসেছে। এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি।
কিন্তু এমন প্রশ্নও উঠছে যে এত বছর পরও কেন দেশ দু’টির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বা ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করা যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারের ভেতরে কেউ কেউ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে। তবে সামগ্রিকভাবে সরকারের নীতি হচ্ছে, সব দেশের সাথে জাতীয় স্বার্থ ও সমান মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
সেই নীতি অনুসরণ করেই অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সাথে এগোচ্ছে বলে ওই উপদেষ্টাদের দাবি।
কূটনীতিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত বা বিশ্লেষক, যাদের সাথেই কথা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই মনে করেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে পাকিস্তানের মাথে ভালো সম্পর্ক হতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অমীমাংসিত ইস্যুতে সমাধান না হওয়ার বিষয়।
এখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক কোন ধরনের, কে কী পেতে চাইছে, তা স্পষ্ট নয় বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সেজন্য নানা প্রশ্ন উঠছে।
এছাড়া, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি নিয়ে কোনো চিন্তা এর পেছনে কাজ করছে কি না, এমন সন্দেহও প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
ভূ-রাজনীতির প্রশ্ন কেন আসছে
বাংলাদেশে একটা গণ-অভ্যুত্থানের মুখে রাজনীতির পালাবদল এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি যখন হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান নতুন সম্পর্ক দৃশ্যমান করা হচ্ছে।
ফলে এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে দু’দেশেরই ভূ-রাজনীতির বিবেচনায় কোনো কৌশল থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
তারা বলছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক যেহেতু কোনোভাবে টিকে রয়েছে। সম্পর্ক ভালো করার কোনো আগ্রহও ভারত দেখাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির কোনো বার্তা দেয়ার কৌশল বাংলাদেশের থাকতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানও ভারতকে ঘিরে বাংলাদেশ প্রশ্নে নতুন কৌশল নিয়ে থাকতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর ভারতের বলয়ের বাইরের এসেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ অঞ্চলে বেশিভাগ দেশের ওপর ভারতের প্রভাব এখন কমেছে। সেই তালিকায় এখন বাংলাদেশও এসেছে। আর এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে জোরালে সম্পর্ক গড়ে এ অঞ্চলে ভারতের প্রভাব আরো কমানো পাকিস্তানের লক্ষ্য হতে পারে।
ভূ-রাজনীতি আরো বড় পরিসরে যদি দেখা হয়, তাতে দেখা যায়, পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্ক পুরোনো এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের চাপের মুখে ভারত চীনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পথে হাঁটছে। রাশিয়া, চীন, ভারত- এখন কাছাকাছি এসেছে। এই তিন দেশের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভূ-রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে কি না, সেদিকেও সবার নজর রয়েছে।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদশে-পাকিস্তান সম্পর্কে পেছনে দেশ দু’টির কোনো কৌশল থাকলেও ভূ-রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতায় তা কতটা কাজ করবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকে আবার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করছেন ভিন্নভাবে।
আলতাফ পারভেজ বলছেন, ভারত একটি দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়েছিল। দলটির শাসনের পতনের পর যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে এখন ভারত বিরোধিতা বেড়েছে এবং ওই সম্পর্ক টেকেনি।
এখন পাকিস্তানও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের সেই একই মডেল অনুসরণ করছে বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় ‘বাছাই করা’ দুই-তিনটি দলের নেতাদের সাথে তার বৈঠকের বিষয় উল্লেখ করেন।
আলতাফ পারভেজের মতে, পাকিস্তানের চিন্তাতেও বাংলাদেশের মানুষের মনোভাবকে গুরুত্ব দেয়া বা আস্থা অর্জনের বিষয় নেই।
আসলে সমস্যা জিইয়ে রেখে বাংলাদশ-পাকিস্তান যখন নতুন সম্পর্কের কথা বলছে, শেষপর্যন্ত তা কত দূর যাবে- এর জবাব পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
সূত্র : বিবিসি