মালদ্বীপে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার ড. মো: নাজমুল ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজ্জ্-এর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
রোববার (৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের গাজী হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হাইকমিশনার তার পরিচয়পত্র তুলে দেন। এর মাধ্যমে মালদ্বীপে তার কূটনৈতিক দায়িত্বের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
রাষ্ট্রপতি প্যালেসের রিপাবলিক স্কোয়ারে পৌঁছালে মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি চৌকস দল নবনিযুক্ত হাইকমিশনারকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। পরে চিফ ও ডেপুটি চিফ অফ প্রটোকল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। গার্ড অফ অনারের পর বেরু ধুম্মারি নামে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে হাইকমিশনার রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
পরিচয়পত্র গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজ্জ্ হাইকমিশনারের সাথে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন। তিনি দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো গভীর হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়বে।
বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো: সোহেল পারভেজ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। হাইকমিশনার ড. নাজমুল ইসলাম মালদ্বীপে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমশক্তি নিয়োগ দেয়ার জন্য দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং জানান, এই শ্রমশক্তি উভয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হবে। সম্প্রতি মালদ্বীপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি মালদ্বীপের কৃষি খাতের উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো নতুন ক্ষেত্রেও সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার ড. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেন এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজ্জ্-কে আমন্ত্রণ জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। নবনিযুক্ত হাইকমিশনার ড. মো: নাজমুল ইসলাম এক দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সংসদীয় কূটনীতিক। মালদ্বীপে যোগদানের আগে তিনি তুর্কি পার্লামেন্টের (টিবিএমএম) উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটে (এফএসআই) কূটনীতিকদের প্রশিক্ষক এবং আঙ্কারা ইলদিরিম বায়েজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট প্রধান ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব ও কৌশলগত গবেষণায় তার গভীর পাণ্ডিত্য রয়েছে। ‘পশ্চিমা বিশ্বের বাহিরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব ও সফট পাওয়ার কৌশল’ বিষয়ে তার গবেষণা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তার এই বহুমুখী অভিজ্ঞতা মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো কৌশলগতভাবে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।