প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সাথে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি প্রধান সেতুবন্ধন হিসেবে দেখতে চাই। আসিয়ানের সাথে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আমাদের আবেদন পূর্ণ সদস্যপদের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থাটির সদর দফতরে উভয়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ নীতি সম্পর্কে জানতে চান।
বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসঙ্ঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ান সদস্যপদ প্রক্রিয়া, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ব্যবহার-সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান, যারা গত ১৪ মাস ধরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রদান করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন অতুলনীয়।’
প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমাদের মানুষ একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এখন তারা ফেব্রুয়ারির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’
অধ্যাপক ইউনূস ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে জানান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরের পথে রয়েছে, যা গভীর রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে গণ্য হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অন্তর্বতী সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচারের মুখোমুখি থাকা সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ন্যায়বিচারের জন্য প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে।’
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসঙ্ঘ সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রেসিডেন্ট স্টাব বলেন, ‘বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল পরিবর্তনশীল। জাতিসঙ্ঘকে শক্তিশালী করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, জাতিসঙ্ঘ বিশ্বব্যাপী বড় সঙ্কট মোকাবিলায় কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং জাতিসঙ্ঘ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যথাযথ প্রভাব রাখতে সক্ষম হচ্ছে না।’
উভয় নেতা দীর্ঘমেয়াদি রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা আঞ্চলিক সংযোগ ও বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে প্রবেশাধিকারের সুবিধা প্রদান বিষয়েও আলোচনা করেন।
‘এই উদ্যোগ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুততর করবে’ বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
বৈঠকে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস