সাংবাদিক শামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা জিডি প্রত্যাহারের দাবি

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ
সাংবাদিকদের প্রতিবাদ |নয়া দিগন্ত

সংবাদ প্রকাশের জেরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্থায়ীসদস্য ও নয়া দিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার শামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন নেত্রকোনার সাবেক ডিসি (বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব) বনানী বিশ্বাস। গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর রমনা মডেল থানায় এ হয়রানিমূলক জিডি করেন তিনি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিডি প্রত্যাহার ও বনানী বিশ্বাসকে তার কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

রোববার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিপীড়নবিরোধী সাংবাদিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, নর্থ বেঙ্গল জার্নালিস্ট ফোরাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, নাটোর জেলা সংবাদিক সমিতি স্ব-স্ব ব্যানারে অংশ নেয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সভাপতি মাসুদুল হক সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন নিপীড়ন বিরোধী সাংবাদিক জোটের আহ্বায়ক আবুল কালাম।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রাশিদুল হক, সহ-সভাপতি রফিক মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফউজে) সাবেক সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও নর্থ বেঙ্গল জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, ডিইউজের সাংগঠানিক সম্পাদক সাঈদ খান।

আরো কথা বলেন ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসাইন, ডিআরইউর সহসভাপতি গাজী আনোয়ার, সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিপক দেব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, বিএসআরএফর সহ-সভাপতি মাইনুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল, নাটোর জেলা সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ডিআইউর কর্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আক্তারুজ্জামান, ই-ম্যাথ সম্পাদক কাজী খায়রুল বাশার, দৈনিক চলনবিল প্রবাহ সম্পাদক মাহমুদল হক খোকন, বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ মমিনুর রশিদ শাইন, মহাসচিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হাসান সরদার জুয়েল, যুগ্ম মহাসচিব আরফাতুর রহমান আপেল, ঠাকুরগাঁও জেলা সাংবাদিক সমিতি ঢাকার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ নাসিম শিকদার, নিউ নেশনের সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ শিমুল পারভেজ প্রমুখ।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হলে তাকে নেত্রকোনার ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হয়। পরে তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওই কর্মকর্তা শামছুল ইসলামকে ভয়-ভীতি দেখানো ও হয়রানির উদ্দেশ্যে এই জিডি করেন। জিডিতে বনানী বিশ্বাস যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও স্বাধীন সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ।

নেতারা আরো বলেন, স্বৈরাচারের দোসর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের মামলার ১৩ নম্বর আসামি এ কর্মকর্তা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি করার দুঃসাহস দেখান কিভাবে? সংবাদ প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে যেকোনো ঘটনা একজন সাংবাদিক তুলে ধরতে পারেন। বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিউজ হওয়ার পর তাকে প্রত্যাহার করা তার দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ। তিনি এতে সংক্ষুব্ধ হলে নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি ও প্রেস কউন্সিলে অভিযোগ করতে পারেন। তিনি তা না করে উল্টো পথে গিয়েছেন।

এ সময় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ হয়রানিমূলক জিডি প্রত্যাহার ও বানানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রাণায়লয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানান সাংবাদিকরা।

গত ৩০ জুলাই বনানী বিশ্বাসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেলে সংবাদ প্রকাশের ২৫ দিন পর অর্থাৎ ২৫ আগস্ট তাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।