বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির লন্ডনে থাকা ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের অপরাধ দমন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাজেন্সি (এনসিএ), যা বাংলাদেশী টাকায় ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
সাবেক শাসকের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পদের সন্ধান করার বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর চাপ ক্রমশ বৃদ্ধির মধ্যেই সম্পদ জব্দের এ তথ্য সামনে এসেছে। সরকারি নথিপত্রে ঘেঁটে জানা গেছে, এনসিএ সম্পদ জব্দের মোট নয়টি আদেশ পেয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। এর মধ্যে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ নিয়ে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে শায়ান ও শাহরিয়ার- দুজনের নাম রয়েছে। গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
জব্দ সম্পদের প্রতিটি ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, আইল অফ ম্যান বা জার্সিতে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে কোম্পানিগুলোর আবাসন নথিতে উল্লেখ আছে। একেকটি সম্পদ ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে শুরু করে ৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের মধ্যে কেনা হয়েছে।
গত বছর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) যৌথ অনুসন্ধানে শায়ান ও শাহরিয়ারের নামে থাকা সম্পদের তথ্য উঠে আসে। এতে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদের কথা জানা যায়।
এনসিএর জব্দ করা সম্পদের মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসের একটি অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বোন ও যুক্তরাজ্যের সাবেক নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা গ্রেশাম গার্ডেনসের ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেছেন। সংবাদমাধ্যমটি ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা দুটি সম্পদ জব্দের বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের নীতি পরিচালক ডানকান হেমস বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার এবং বিলম্ব না করে সব সন্দেহভাজন সম্পদ জব্দ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এনসিএর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে চলমান সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ বেশ কয়েকটি সম্পত্তির বিরুদ্ধে জব্দ করার আদেশ পেয়েছে।’
বাংলাদেশের সাবেক সরকারের শাসনামলের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এর জেরে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অভিযোগের মুখে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। যদিও তিনি কোনো ধরনের ‘অনিয়মে’ যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেন।
সালমান এফ রহমান ও তার প্রতিষ্ঠিত করপোরেট প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর আইনজীবীদের সাথে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করেছে গার্ডিয়ান।
আহমেদ শায়ান রহমানের একজন মুখপাত্র এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, ‘আমাদের মক্কেল যেকোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তিনি অবশ্যই তাতে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সেখানে শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বিষয়টি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে বলে আমরা আশা করি।’