মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সাথে আর্থিক প্রতারণা, হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডি এজাহারভুক্ত ৬ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫০), ওয়াহিদুজ্জামান (৫২), মো. গোলাম সারওয়ার আজাদ (৫১), মো. তরিকুল ইসলাম, রিপন ফকির (৪৯), রাজীব সরদার (৩৭) এবং উজ্জ্বল কুমার সাধু (৩৮)।
পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান জানান, বাংলাদেশের নাগরিকের মাধ্যমে একজন মার্কিন নাগরিক প্রতারিত হলে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতা চায়। সেই সূত্রে সিআইডি অনুসন্ধান শুরু করে। সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে— মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ‘ডেবি’র সাথে এই প্রতারকচক্র বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন ও সখ্যতা গড়ে তোলে। এই প্রতারকচক্র তাদেরকে ড্রাগ ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ( ডিইএ) পরিচয় দিয়ে ২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজাট ৩৫১ টাকা) আত্মসাৎ করে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই প্রতারকচক্র ছল-চাতুরী ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আমেরিকার ভুক্তভোগী নাগরিককে বাধ্য করে— যেন তিনি আমেরিকায় অবস্থিত বিভিন্ন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর কাছে আত্মসাৎ করা অর্থ প্রেরণ করেন। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ওইসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযুক্তরা তাদের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা গ্রহণ করে। অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ প্রতারণা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এই সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনায় অভিযুক্তরা নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করে আসছে।
অনুসন্ধানে উঠে আসা এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে— আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে আইনক্স ফ্যাশনের নামে ইউসিবিএলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নামে ঢাকা ব্যাংক লি., ওয়ান ব্যাংক লি., এবি ব্যাংক লি., ও এনআরবিসি ব্যাংক লি.-এ পৃথক ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জামান এন্টারপ্রাইজের নামে ব্র্যাক ব্যাংক লি.-এ একটি ব্যাংক একাউন্ট এবং নোহা এন্টারপ্রাইজের নামে সাউথ-ইস্ট ব্যাংক লি.-এ একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়-বহিঃর্ভূত লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া মামলায় অভিযুক্ত মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস নামে থাকা অ্যাকাউন্টেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে।
মার্কিন নাগরিকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে আরো উঠে আসে— অভিযুক্তরা স্বর্ণ চোরাচালান কারবারের সাথে জড়িত। তারা বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত ব্যক্তি, ঢাকার তাঁতীবাজারসহ অন্যান্য স্থানের বিভিন্ন দোকান হতে ভাঙারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে। পরে তা গলিয়ে পাকা সোনার বার আকারে দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিযুক্তরা মোট প্রায় ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৩৭২ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ-বিলাস, অর্থপাচারসহ নামে-বেনামে সম্পত্তির মালিক হয়েছে। যা স্পষ্টতই মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের আওতাভুক্ত। ফলশ্রুতিতে এ সংক্রান্তে ডিএমপি কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।