বায়রার সাবেক নেতা ফখরুল মানবপাচার মামলায় গ্রেফতার

বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মানবপাচার ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার হয়েছেন; প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম |নয়া দিগন্ত

জনশক্তি রফতাীনকারকদের সংগঠন বায়রার বহুল আলোচিত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মানবপাচারের মামলায় সোমবার (১০ নভেম্বর) এয়ারপোর্টে গ্রেফতার হয়েছেন।

এর আগে বায়রার এই নেতা ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানবপাচার এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়।

প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করেছেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো: রুবেল হোসেন।

বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: রাসেল সরোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এজহারে বলা হয়েছে, রুবেল হোসেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার। তিনি বারিধারার হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারের (আরএল-৪৫২) প্রোপ্রাইটর ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের সাথে অনুমানিক পাঁচ বছর আগে ব্যবসায়িক সুবাধে পরিচিত হন। তাদের সাথে দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে ফখরুল ইসলাম ও জসিম একত্র হয়ে রুবলেকে বলেন, তাদের কাছে মালয়েশিয়ার ভালো ভালো কোম্পানির ভিসা আছে। রুবেল ওইসব ভিসায় লোক পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই বছরের ২৫ মে ফখরুল ও জসিম বনানীর মেসার্স আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল নাম অফিসে দেখা করেন। ফখরুল ও জসিম বলেন, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি যেমন নিউ ভিশন গ্রিন ল্যান্ড এসএনডি, প্রিমভিনান ডান কেজুরটিউরান এসইইএ এসনডি, চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি এসএনডি কোম্পানিতে শ্রমিকের ডিমান্ড আছে বলে জানান। তারা শ্রমিকদের পাসপোর্ট থাকলে জমা দিতে বলে। ফখরুল ও জসিম শ্রমিক পাঠাতে পাসপোর্ট প্রতি পাঁছ লাখ ৫০ হাজার দিতে হবে মর্মে মৌখিক চুক্তি করে। বাদি আসামিদের কথায় সরল বিশ্বাসে চুক্তি অনুযায়ী আসামিদেরকে ২০২৩ সালের ২৭ মে বনানী থানাধীন আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল অফিসে বসে ৫৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণের জন্য কথা বলে। পাসপোর্টসহ কর্মীপ্রতি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নগদ তিন কোটি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আসামিদের দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৭ জুন আসামিরা মালয়েশিয়ার ইকো ইন্টেরিয়র্স ইন্টারন্যাশনাল নামক কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২৪ জন কর্মীর পাসপোর্ট নেন। ওই ২৪ কর্মী হলেন রফিকুল ইসলাম, সাগর আলী, রাজু আহমেদ, ইয়াসিন আরাফাত, রাকিব হাসান, আব্দুল আলিম, আলমগীর হোসেন, এনামুল হক, রইজুল ইসলাম, শরিফ আহমেদ, আসাদুল ইসলাম, রাসেল ব্যাপারী, লিটন মিয়া, জামাল শাকি, মো: হুমায়ুন কবির, মোস্তফা আলী, সাগর মিয়া, আব্দুল আলীম, আমিরুল ইসলাম, মোহাব্বত আলী, শিহাব উদ্দিন, আলীফ আহমেদ, চনু মিয়া ও সজিব হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন তারিখে চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি এসএনডি কোম্পানীতে চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সুজন খান ও নূর আলম খানকে এবং এলবিএস ইন্ডাস্ট্রিজে বাবলু ও বাদল নামে আরো চারজনসহ মোট ২৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠান। কিন্তু আসামিরা উল্লেখিত শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। চুক্তি মোতাবেক কোম্পানিতে চাকরি না দিয়ে অন্যত্র নিয়ে আটকে রাখেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে পুন:রায় টাকা দাবি করেন। বাদি বিষয়টি জানতে পেরে তার অ্যাজেন্সি মাধ্যমে আসামিদের সাথে যোগাযোগ করেন। আসামিরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। একপর্যায়ে আসামিরা বাদির চাপের মুখে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

আরো বলা হয়, আসামিরা চুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের কাজ দেয়নি। প্রেরিত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও আসামিরা বিভিন্ন টালবাহানায় বাদি ও তার লোকজনদের ঘুরাতে থাকেন। পরবর্তীতে বাদি রুবেল আসামিদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠানো ২৮ জন কর্মীর সমস্যা সমাধান কিংবা পাঠানো শ্রমিকদের দেশে ফেরত নিয়ে আসার কথা বলেন। অন্যদের শ্রমিকদের জন্য জমা দেয়া আরো ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত চান বাদি। কিন্তু আসামিরা টাকা না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি এবং টাকা না দেয়ার জন্য নানা রকম টালবাহানা করে যাচ্ছে।

এজহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাদি ও শ্রমিকদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ভালো কাজের আশ্বাস দিয়ে মালয়েশিয়ায় (বিদেশী) কর্মীদের প্রেরণ করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে চুক্তি মোতাবেক কাজ প্রদান না করে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করেন। এছাড়াও আসামিরা মালয়েশিয়াল শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে বাদির কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। আসামিদের কাছে বাদির এখনো এক কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছেন।

জানা গেছে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী ফখরুল আগেও বহু মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দেয়নি। তার বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণা ও মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। ফখরুল সেগুলো থেকে আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে গেছেন।