মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি স্বর্ণের দোকানের সাটারের তালা কেটে প্রকাশ্যে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় দুই কোটি ৫৬ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তায় মসজিদ গলিতে গৌরাঙ্গ দাসের মালিকানাধীন রিতা জুয়েলার্স নামের একটি স্বর্ণের দোকানে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে দোকানের সামনে পায়েল সরকার নামে এক নারী এসে দাঁড়ান। কিছু সময় পর ওই নারীর সাথে কয়েকজন যুবক যোগ দেয়। এরপর ওই নারীর নেতৃত্বে রিতা জুয়েলার্সের সাইনবোর্ড টেনে নামাতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বিশেষ যন্ত্র (গ্রাইন্ডিং মেশিন) দিয়ে তারা সাটারের তালা কেটে ফেলেন। দোকানের ভেতরে ঢুকে এক ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র বাইরে আনতে নির্দেশনা দেন। এরপরই পায়েল সরকার ও তার সহযোগীরা দোকানের ভেতরের মালামাল বের করে আনা শুরু করেন। এসময় জুয়েলার্সের দোকানে থাকা সিন্দুক বাইরে আনা হয় এবং শপিং ব্যাগে করে দোকানে থাকা স্বর্ণালংকার সরিয়ে নেয়া হয়। পরে ওই দোকানের সামনে ‘সুব্রত চন্দ্র দাস’ নামে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।
রিতা জুয়েলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘দোকান বন্ধ রেখে একটি মামলায় হাজিরা দিতে আমি আদালতে ছিলাম। হঠাৎ আমার আরেক দোকানের কর্মচারী সাটার কাটার বিষয়টি আমাকে জানায়। এসে দেখি বাইরে দোকানের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং দোকানে থাকা সমস্ত স্বর্ণ, রূপা ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। তারা শো-কেসে থাকা ৩২ লাখ টাকার ১৬ ভরি স্বর্ণ, সিন্দুকে থাকা এক কোটি ৯২ লাখ টাকার স্বর্ণ, নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১৩০০ ভরি রূপা লুট করেছে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে আমার দোকান লুট করা হয়েছে। আমি ভাড়াটিয়া, আমার দোকান কেন লুট করা হবে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ দাস আরও জানান, ‘সিসিটিভিতে ফুটেজে থাকা ওই নারী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ সরকারের দ্বিতীয় স্ত্রী পায়েল সরকার।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে তাদেরকে ব্যবহার করে পায়েল দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দখলবাজি ও লুটপাটসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দিনে দুপুরে স্বর্ণের দোকানে তালা কেটে লুটপাটে ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক প্রকার অনিশ্চয়তায় সন্ধ্যার পরপরই ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি এসে দেখি তারা অনেকেই দোকানের ভেতরে রয়েছে। দলবল নিয়ে এসে তারা প্রকাশ্যে দোকানের মালামাল বের করেছে। আমরা সবাই আতঙ্কিত ছিলাম তখন।’
দীর্ঘদিন ধরে ওই দোকানের ভোগদখলে থাকা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জমিটি আমি ২০১২ সালে কিনে গৌরাঙ্গ দাসকে দোকান করে ভাড়া দিয়েছিলাম। পরে একই মালিকের ছেলের কাছ থেকে সুব্রত দাস ২০২১ সালে এটি ক্রয় করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পায়েল ও সুব্রতর নেতৃত্বে দোকান ভেঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পায়েল সরকার বলেন, ‘সেখানে আমিসহ হাজার হাজার মানুষ ছিলেন, আমার নেতৃত্বে লুটপাটের বিষয়টি মিথ্যা। যার জমি তার নেতৃত্বেই হয়েছে।’
মালিকের অনুপস্থিতে দোকান ভেঙ্গে লুটপাটের বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত সুব্রত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আপনি সামনাসামনি আসুন, কাগজপত্র দেখুন।’ মোবাইলফোনে কোনো বক্তব্য দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’



