একটি দুটি নয় ১১০০ সামুরাই-চাপাতি উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যা ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের কাছে ফ্রিতে সরবরাহ করতেন সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ীরা। ধারালো অস্ত্র মজুদ করে প্রতিদিন সেখান থেকে দুষ্কৃতিকারীদের কাছে ফ্রিতে সরবরাহ করতেন। গত রোববার রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় এমনি একটি গোপন গোডাউনের সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনী।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ আর্মি ক্যাম্পের ব্রিফিংয়ে দেখানো হয় এসব দেশীয় অস্ত্র।
বড় টেবিলে সাজানো চকচকে চাপাতি, সামুরাই ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। এক একটি চাপাতি আর সামুরাই বিশাল আকৃতির। ধারালো আর নিখুঁতভাবে বিভিন্ন কারুকাজ করা এসব অস্ত্র। হাতে ধরার জন্য চাপাতি ও সামুরাইয়ে রয়েছে আরামদায়ক হাতল।
রাজধানীর নিউ মার্কেটে গৃহস্থালির দোকানগুলোতে এমন বড় আকৃতির চাপাতি আর সামুরাই বিক্রি হয়। তবে সাধারণ ক্রেতারা এসব চাপাতি-সামুরাই কিনতে পারবেন না। নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও হোম ডেলিভারির মাধ্যমে এসব চাপাতি-সামুরাই বিক্রি করেন নিউ মার্কেটের অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সেনাবাহিনী বলছে, নিউ মার্কেটের তিনটি দোকান থেকে ১১০০’র বেশি চাপাতি-সামুরাই উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র ঢাকায় হোম ডেলিভারি বেশি হলেও সারা দেশেই ব্যবসায়ীরা ডেলিভারি দিতেন। ছিনতাই-চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহার করতো কিশোর গ্যাং সদস্য ও সন্ত্রাসীরা।
ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনীর ২৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘একজন সাধারণ মানুষ কিনতে গেলে বড় আকারের চাপাতি ও সামুরাই বিক্রি করেন না নিউ মার্কেটের অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে এসব দেশীয় অস্ত্র বিক্রি হয়। হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সুন্দর করে প্যাকিংয়ের পর হোম ডেলিভারি দেয়। কারণ সন্ত্রাসীরা নিউ মার্কেট থেকে এসব চাপাতি-সামুরাই কিনে আনার পথে সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশিকালে ধরা পড়ার ভয় থাকে।’
চাপাতি-সামুরাই ঢাকায় হোম ডেলিভারি বেশি হলেও সারা দেশেই ব্যবসায়ীরা ডেলিভারি দিতেন বলেও জানান তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাংয়ের শোডাউন হচ্ছে। এসব অনেক আসামিকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করতে পেরেছে। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে সামুরাই সদৃশ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও এসব চাপাতি-সামুরাই দিয়ে ছিনতাই, জখম ও নিহতের মতো ঘটনাও দেখা যায়।’
‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী জানতে পারে, এসব চাপাতি ও সামুরাইগুলো সন্ত্রাসীদের সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে। গোপন বিক্রি থেকে শুরু করে কোনো কোনো সময় ভাড়াও দেয়া হচ্ছে। এমনকি ফ্রি হোম ডেলিভারিও দেয়া হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া অনেক সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর কাছে স্বীকার করেছে যে এসব ধারালো চাপাতি-সামুরাইগুলো সাপ্লাই পাচ্ছে। এরপর সেনাবাহিনী গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর নিউ মার্কেটে অভিযানে গিয়ে তিনটি দোকান থেকে ১১০০’র বেশি চাপাতি-সামুরাই উদ্ধার করা হয়।’
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এসব চাপাতি-সামুরাই গোপনে বিক্রি হতো। দোকানে প্রদর্শিত হতো না। গোডাউন থেকে এগুলো সাপ্লাই দেয়া হতো। এ ঘটনায় তিনটি দোকান থেকে মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম আহমেদ বলেন, কেউ এই ধরনের ‘সামুরাই’ চাপাতি বা ধারালো অস্ত্র বিক্রি করবেন না। অনেকেই এগুলো স্যুভেনির হিসেবে সংগ্রহ করেন, কিন্তু দেশের বর্তমান বাস্তবতা হলো—এগুলো বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যবহার করছে এবং এতে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এই প্রবণতা যেকোনোভাবে বন্ধ করতে হবে।
সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে এবং আমরা তা বন্ধ করবোই। আপনাদের আশেপাশে কেউ ধারালো অস্ত্রের অবৈধ ব্যবসা করলে নিকটস্থ ক্যাম্পে খবর দিন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিশোর গ্যাংয়ের কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল নাজিম বলেন, গত তিন-চার মাস ধরে এসব অস্ত্র মজুত করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কাছে দেখা যাচ্ছে। এসব অস্ত্র হোম ডেলিভারি দেয়া হয়। মূলত সন্ত্রীরা ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই হোম ডেলিভারি নিয়ে থাকে।
আটক নয়জনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং এ বিষয়ে মামলার পর আরো অধিকতর তদন্ত করা হবে বলেও জানান সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা।