রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে তিন দিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ স্টেকহোল্ডারস ডায়লগ আয়োজন করছে রোহিঙ্গা ইস্যুবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত উখিয়ার ইনানীতে সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া দেশী-বিদেশী কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
আয়োজক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা প্রক্রিয়া নতুন করে গতি পেতে পারে এ সম্মেলনের মাধ্যমে। এতে অংশ নেবে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব সহকারে তোলা সহজ নয়। তবু এ সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সরাসরি বিশ্ববাসীর কাছে তাদের কথা বলার সুযোগ পাবে। আমরা আশা করছি, কক্সবাজারের এ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কট ও তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে আলোচিত হবে। এরমধ্যে ২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম অধিবেশনে মানবিক সহায়তা, টেকসই সমাধান এবং রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আর ২৬ আগস্ট বিদেশী অতিথিরা সরাসরি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।’
জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা জান্তার নির্মম নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে ২০১৭ সালের পর থেকে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বিশাল শরণার্থী শিবির গড়ে ওঠে, যা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। তবে দীর্ঘ আট বছরে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে এতো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি স্থানীয় জনজীবনকে নানা দিক থেকে চাপে ফেলেছে। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ভয়াবহ মাদক ব্যবসার কারণে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ১০৭টি দেশের অংশগ্রহণে উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বসার কথা রয়েছে। কক্সবাজারের এ আয়োজনকে সেই সম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন নীতিনির্ধারকরা।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বহুল প্রতীক্ষিত এ আন্তর্জাতিক সংলাপ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় নতুন করে আশার আলো জাগতে পারে।