জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ যখন উত্তাল তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাজমুল মিয়া (২৫)। আর এই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তিনি। নাজমুল জীবন দিয়ে দেশে শান্তি বয়ে আনলেও দুর্বিষহ জীবন কাটছে তার মা গোলেভান বেগমের। চলতি রমজান মাসেও তার পেটে জুটছে না ভালো খাবার। দরিদ্রতার কষাঘাতে কোনোমতে খেয়ে রোজা পালন করছেন জুলাই বিপ্লবের শহীদের এই মা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেহারা শোক আর সংসার চালানোর চিন্তায় যেন দিন কাটছে না গোলেভানের।
‘হামরা গরীব মানুষ। কোনো জমিজিরাত নাই। ইসকাওয়ালা সোয়ামি মেলাদিন হলো মরে গেছে। হামারঘরে একটায় বেটা নাজমুল। বিয়ে না করে গার্মেন্টেসের চাকরি নিয়ে হামাক পালছিল। এরপর মানসের সাতে শেখ হাসিনার বিরুদ্দে আন্দোলন যায়্যা হামার বেটা বন্দুকের গুলিখায়্যা মরচে। একন এ্যালা হামি সংসার চালাবার পাতিছিনা বাহে। ট্যাকার অভাবে এই অজাত (রোজা) মাছ-গোশতও খাবার পাম না। শুনচিলাম সরকার নাকি হামাক ট্যাকা দিবি। যদি দিলো হয় তাহলে মোর এ্যানা কষ্ট ঘুচলো হয় বাবা,’ আঞ্চলিক ভাষায় এমনভাবে কথাগুলো বলছিলেন শহীদ নাজমুল হোসেনের মা গোলেভান বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজমুল মিয়া। তার রিকশাচালক বাবা হামিদুল ইসলাম হাইদুল প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে মা গোলেভান বেগম সংসার চালাতে হিমশিমে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে সংসারে হাল ধরেন নাজমুল। জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার সিয়াম গার্মেন্টেসে চাকরি করছিলেন নাজমুল মিয়া।
সারাদেশ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল, তখন নাজমুল মিয়াও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন। সেই গুলি ঢোকে পেটের ভেতর। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট সন্ধ্যার পর মারা যান নাজমুল।
এরপর ধারদেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে ১০ আগস্ট সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এরপর গেল ফেব্রুয়ারি মাসে সেই করব থেকে নাজমুলের লাশ উত্তোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয় প্রশাসন। এ সময় স্থানীয়দের বাধার মুখে লাশ তুলতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন।