বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় লেগেই থাকে। দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এ সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যেমন মুগ্ধ করে তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগেরও জন্ম দিচ্ছে। পর্যটকদের চোখে এখন বারবার ধরা পড়ছে সৈকতের বুকে উপড়ে পড়ে থাকা সারি সারি ঝাউ গাছ। ঢেউয়ের প্রবল স্রোত ও তীর ভাঙনের চাপে এ ঝাউবন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছরে কক্সবাজার সৈকতের একাধিক পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার নিয়েছে। হিমছড়ি, কলাতলী, লাবণী, সুগন্ধা ও শৈবাল পয়েন্টে বড় অংশ জুড়ে উপকূল ক্ষয় হচ্ছে। ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে সাগরে ভেসে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে হাঁটার পথ ও বসার জায়গা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে।
উপকূলীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, ঝাউগাছ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয় বরং উপকূল রক্ষার এক প্রাকৃতিক বাঁধ। এটি ঢেউয়ের চাপ কমায় এবং বালু ধরে রাখে। কিন্তু ঝাউবন ধ্বংস হলে সৈকতের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে ভবিষ্যতে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বাড়বে।
পর্যটকরা জানান, তারা কক্সবাজারে এসে শুধু নীল জলরাশি দেখতে চান না—সাথে দেখতে চান অক্ষত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢেউয়ের গর্জনের পাশাপাশি ঝাউবনের সবুজ শোভা হারিয়ে যেতে বসেছে। যা পর্যটনের জন্যও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভাঙন রোধে কক্সবাজার সৈকতে জিও ব্যাগ ও কংক্রিট স্ল্যাব বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে ঝাউবন রোপণের উদ্যোগও নেয়া হবে।
তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, কেবল প্রযুক্তিগত সমাধান নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা জরুরি। বাংলাদেশের এ দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়। এটি দেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। আর এ ঐতিহ্য রক্ষার দায় সবার। উপকূল রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য আনতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।