৫৪ বছরেও আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি : নজরুল ইসলাম

‘ভারতের শিখিয়ে দেয়া গল্প আমাদের গেলানো হয়েছে। আজকের এ দিনে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।’

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আয়োজিত যুব র‌্যালিতে নেতাকর্মীদের ঢল
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আয়োজিত যুব র‌্যালিতে নেতাকর্মীদের ঢল |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘৫৪ বছরেও আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। ভারতের শিখিয়ে দেয়া গল্প আমাদের গেলানো হয়েছে। আজকের এ দিনে আমাদের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে।’

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আয়োজিত যুব র‌্যালিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে ৭ কোটি জনগণ বিশেষ করে শ্রমিক, ছাত্র ও যুবসমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। ৫৪ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশ শাসন করলেও মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মানুষ সেই স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে। তাই ১৬ ডিসেম্বরের পাশাপাশি আমাদের ৩৬ জুলাইকেও স্মরণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন রংপুরের আবু সাইদ, চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমদ শান্ত ও মোহাম্মদ ফারুকসহ শত শত ছাত্র-জনতা। তাদের রক্তদানের মাধ্যমেই এ দেশের যুবসমাজ ভারতীয় বয়ান, হেজিমনি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।’

জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য মানুষের ত্যাগ-কুরবানির বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ওয়াদা দিয়েছিল ইসলামের আলোকে বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করবে। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরেও তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। পাকিস্তানগোষ্ঠী গড়িমসি করতে করতে শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চে আমাদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে। কিন্তু সেই রাতের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানানো হয়নি। আজকের দিনে ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলো উদ্ধার করতে হবে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে আমাদের বিজয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ঢাকাসহ প্রধান সড়কগুলো দখলে নেয়। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় ১৪ ডিসেম্বর আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী বিজয়ের দিনে কোথায় ছিলেন? আত্মসমর্পণ দলিলে তাকে কেন স্বাক্ষর করতে দেয়া হয়নি? আজ আমাদের এসব ইতিহাস জানতে হবে।’

সমাপনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সাথে বসবাস করছে। আমাদের ঐক্য কেউ ভাঙতে পারবে না।’

জানা যায়, র‌্যালিটি নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার মাধ্যমে শেষ হয়। এতে হাজার হাজার শ্রমিক, যুবক ও ছাত্রজনতা অংশ নেয়।

র‌্যালি-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব বিভাগ চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ও নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নগর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান ও জামায়াত নেতা ডা: আবু নাছের।