তিন বছরেও শেষ হয়নি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় আমুয়া খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। সময় ও বরাদ্দ বাড়লেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতের প্রধান সড়কে সেতু না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ। এতে ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীসহ প্রায় দুই লাখ মানুষ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট একটি কার্গো ধাক্কা দিলে ৬৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ভেঙে পড়ে। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি নতুন করে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালের মে মাসে কাজ শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে। তবে ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করছে মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কবির ব্রাদার্স। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও বসানো হয়েছে মাত্র কয়েকটি পিলার।
সেতুর পাশেই স্থানীয়দের চলাচলের জন্য কাঠের বিকল্প একটি সেতু তৈরি করা হলেও তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন কাঁঠালিয়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। পাশের বরগুনার বামনা ও বেতাগী থেকেও অনেকে এই হাসপাতালমুখী হন। কাঠের সেতু দিয়ে রোগী পরিবহন করতে গিয়ে বাড়তি ঝুঁকি ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাপস তালুকদার বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক রোগী অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক শাকিল মিয়াজী বলেন, ‘কাছের হওয়ায় এ হাসপাতালে বামনা ও বেতাগীর মানুষও আসতেন। কিন্তু এখন সবাই ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন।’
স্কুল শিক্ষার্থী মোসা: মিম আক্তার বলেন, ‘কাঠের সেতুটি খুবই নাজুক। বর্ষায় রিকশা ও অটো চলাচলে ঝুঁকি আরো বেড়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী সুবীর সরকার বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
কাঁঠালিয়া উপজেলা আমির মাস্টার মো: মজিবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন যাবত আমুয়া হাসপাতালে যাওয়ার সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের অনুপোযোগী ছিল। জামায়াতের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই সেতুটি কাঠদিয়ে মেরামত করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করে তুলেছে। ফলে এই এলাকার সাধারণ জনগণ এর সুফল ভোগ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। পর্যায়ক্রমে কাঁঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আরো বেশ কয়েকটি সড়ক, সাঁকো ও রাস্তা জামায়াত কর্মীরা স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে মেরামত করে দিবে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই সেতুটি ব্যবহারের অনুপোযোগী ছিল। আমাদের চলাফেরায় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতো। বিশেষ করে রাতের বেলায় চলাফেরা করা খুবই কঠিন ছিল। জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা এই সেতুটি মেরামত করে দেয়ায় এলাকাবাসীরা খুবই উপকৃত হয়েছি।
উল্লেখ্য, কাঁঠালিয়া উপজেলায় প্রায় দু’লাখ মানুষের বসবাস। এখানে থাকা একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাশের আরো দুই উপজেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে সেতু না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।