বৈষম্যের অভিযোগে পার্বত্য উপদেষ্টাসহ যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার অপসারণ দাবি

সোমবার (৭ জুলাই) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ‘সচেতন মারমা সমাজ ও সচেতন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের’ পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বৈষম্য, স্বজাত ও স্বজনপ্রীতি এবং নিপীড়নের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

রফিকুল ইসলাম রকি, খাগড়াছড়ি

Location :

Khagrachari
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন |নয়া দিগন্ত

পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহে ত্রিপুরা-মারমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব বঞ্চিত রাখা এবং নগদ অর্থসহ খাদ্যশস্য বরাদ্দে বৈষম্যের প্রতিবাদসহ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও যুগ্ম সচিব কংকন চাকমাকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ‘সচেতন মারমা সমাজ ও সচেতন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের’ পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বৈষম্য, স্বজাত ও স্বজনপ্রীতি এবং নিপীড়নের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

এসময় লিখিত বক্তব্যে রুমেল মারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ, বণ্টন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে একতরফা পক্ষপাতিত্ব ও জাতিগত বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। অথচ পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত ও শেখ হাসিনার মনোনীত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। যা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক বিষয়।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রকল্প বণ্টন, খাদ্যশস্য ও অর্থ বরাদ্দসহ সকল ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে একচেটিয়াভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খুনি হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকা মার্কার অবৈধ জনপ্রতিনিধিদের বরাদ্দ ও প্রকল্প দিয়ে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতে শুধু মারমা ও ত্রিপুরা নয়, অন্যান্য পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীরাও মারাত্মকভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার বিরুদ্ধেও সচিবালয়ে স্বজাত ও স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এছাড়াও তিনি ফ্যাসিবাদী দোসরদের সাথে গোপন যোগাযোগ রেখে পার্বত্য তিন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের জন্য নানাভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

বক্তারা আরো বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমার সুপারিশে এজাহারভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

সম্মেলনে সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণ, কংকন চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের পদ থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার, পার্বত্য তিন জেলার প্রকল্প ও বরাদ্দগুলো ন্যায্য ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে সমবণ্টনের মাধ্যমে বাস্তবায়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয়-তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মারমা ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি জানানো হয়।

এসময় তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান বৈষম্য দূরীকরণে আগামী সাত দিনের মধ্যে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দাবিগুলো মেনে না নিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় লাগাতার সড়ক ও নৌপথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে পূর্ব কিরন ত্রিপুরা (কার্বারী), প্রশান্ত ত্রিপুরা, ম্রাচাই মারমা, উক্রাচিং মারমা, চিংলামং মারমা, মিনুচিং মারমা, মিমা ত্রিপুরা, তনয় ত্রিপুরাসহ মারমা-ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।