১১ মাসে ময়মনসিংহ সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্য ও মাদক জব্দ এবং এতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১৪ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ ৩৯ বিজিবি মালটিপারপাস সেডে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সদর দফতরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘অভিযানে চোরাচালান, মাদক পাচার, জালনোট পাচার ও অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলন প্রতিরোধসহ দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে কঠোরভাবে অবৈধ পুশইন প্রতিরোধ করছে বিজিবি। আগামী নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ঠেকাতে সীমান্তে গোয়েন্দা নজর বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিজিবি উত্তর-পূর্ব রিজিয়ন, সরাইলের অধীনস্থ ময়মনসিংহ, সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও কুমিল্লা সেক্টর সদরসহ অধীনস্থ ব্যাটালিয়নগুলো সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান দমন, মাদক প্রতিরোধ, পুশইন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে সর্বদা সচেষ্ট।’
সেক্টর কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরাইল রিজিয়নের ১২০৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় চারটি সেক্টরের অধীনে ইউনিটগুলো ২০২৪ সালে ৭৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার মালামাল আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাস ২৫ দিনে বিজিবি সরাইল রিজিয়ন সীমান্ত সুরক্ষায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এ সময়ের মধ্যে পরিচালিত চোরাচালানবিরোধী অভিযানে মোট ৭১০ কোটি ৮১ লাখ টাকার চোরাই পণ্য ও ৬৪ জন আসামি আটক করা হয়েছে এবং মাদকবিরোধী অভিযানে ৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার মাদক ও ৩৩০ জন আসামিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সেক্টর একা ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকার চোরাই পণ্য ও ১৪ জন আসামি এবং চার কোটি ৬৪ লাখ টাকার মাদকসহ ১০০ জন আসামি আটক করতে সক্ষম হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়াও, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে বিজিবি কঠোরভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ (পুশইন) প্রতিরোধ করছে। অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ দমনে সরাইল রিজিয়নের অধীনস্থ ইউনিটগুলো বিভিন্ন সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১৮ জন আসামিসহ নয় লাখ ৭৫ হাজার ৭৫৬ ঘনফুট বালু ও চার লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ ঘনফুট পাথর জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।’
সেক্টর কমান্ডার বলেন, ‘এসব অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ২৭টি ট্রাক, ৭৫টি ট্রলি, ৪৫টি ট্রাক্টর, ১৮টি লরি ও ৪০টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে এবং বহু অবৈধ সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে জালনোট পাচার রোধে সীমান্তে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চোরাচালান, মাদক, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং ড্রোন, নাইট ভিশন ও ডিজিটাল সার্ভেইলেন্সের মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত সতর্ক করা হচ্ছে যাতে অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে সাথে সাথে বিজিবিকে অবহিত করার পাশাপাশি নিজেরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসব কার্যক্রম সফল করতে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। সীমান্ত সুরক্ষিত রাখলে দেশ সুরক্ষিত থাকবে। আর বিজিবি সেই দায়িত্বে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।’



