দোয়ারাবাজার সীমান্তে জব্দ করা ৯০টি গরু ‘গায়েব’ করায় মামলার নির্দেশ

রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জসিম উদ্দিন এ আদেশ দেন।

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)

Location :

Dowarabazar
সীমান্ত থেকে জব্দ করা গরু
সীমান্ত থেকে জব্দ করা গরু |নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা, বিজিবির জব্দ করা ৯০টি ভারতীয় গরু ‘গায়েব’ করার ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ পাঁচ জিম্মাদার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জসিম উদ্দিন এ আদেশ দেন।

আদেশ সূত্রে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা একটি চালানের জব্দ করা ৯০টি গরু প্রায় তিন মাস আগে জব্দ করেছিল যৌথবাহিনী (টাস্কফোর্স)।

আইনি জটিলতায় ৯০টি গরু নিলাম না দিয়ে যেহেতু জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকসহ পাঁচ ব্যক্তির জিম্মায় দেয়া হয় প্রায় কোটি টাকার ওই ৯০টি গরু। কয়েকদিন পর পুলিশ তদন্তে নামলে জানতে পারে ওই গরুগুলো জিম্মাদারদের কাছে নেই।

এতে আদালত গরুর বিস্তারিত বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলে। কিন্তু জিম্মাদার ব্যক্তিরা ভারতীয় গরু আত্মসাৎ করে ছোট সাইজের দেশীয় গরু নিয়ে আসে। এতে গরু জিম্মাদাররা হেফাজতের শর্ত ভঙ্গ করে আইনিভাবে দোষী সাব্যস্ত হন। তাই সার্বিক বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনিব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

বিধায় মামলার আলামত গ্রহণকারী ব্যক্তি দোয়ারাবাজার উপজেলার মিতালী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক বোগলাবাজার গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে ছবির আহমদ, বোগলাবাজার ইউপি যুবদল সভাপতি পদপ্রার্থী বালিছড়া গ্রামের মরহুম মরতোজ আলীর ছেলে হারুন অর রশীদ, ধর্মপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন পায়েল, স্থানীয় বিএনপি নেতা বোগলাবাজার গ্রামের মরহুম রসমত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি সদস্য দোয়ারাবাজার গ্রামের সাধক আলীর ছেলে বাহার উদ্দিনসহ আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে এই আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মামলা করার জন্য আদালত নির্দেশ দেন।

এছাড়া আদালত আদেশে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিলাম কমিটির সনাক্তকৃত ১৪টি গরু তার হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন এবং অন্য ৭৬টি গরু তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যারা সরবরাহ করেছিলেন তাদের ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।

আদেশনামায় আরো উল্লেখ করা হয়, বিগত ২৬ আগস্ট মামলায় জব্দ করা ৯০টি গরু নিলাম অনুষ্ঠানের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন তদন্তকারী কর্মকর্তা ৯০টি গরু নিলাম কমিটির কাছে উপস্থাপন করেন। তখন নিলাম কমিটি দেখতে পান, মামলার জব্দ করা গরুর সাথে নিলামের দিনে উপস্থাপন করা গরুগুলোর দৈহিক গঠন, উচ্চতা, আকার ও আকৃতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে, সেজন্য নিলাম কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

উপ-নথিতে থাকা নিলাম কমিটির আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিলাম কমিটি তাদের আদেশে উল্লেখ করেছেন জব্দ করা ৯০টি গরুর মধ্যে ১৪টি গরুর দৈহিক গঠন, আকার-আকৃতি বড় সাইজের, বাকি ৭৬টি গরুর দৈহিক গঠন উচ্চতা, আকার ও আকৃতি অনেক ছোট সাইজের, গরুগুলো প্রকৃতপক্ষে এই মামলার জব্দ করা গরু নয়।

উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল দোয়ারা বাজার উপজেলার বোগলাবাজারে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে আসা ৯০টি গরু স্টিলবডি নৌকায় সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশকালে টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে জব্দ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে গরুগুলো নিলামের জটিলতা থাকায় বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৯০টি গরু জিম্মা দেয়া হয় পাঁচ জিম্মাদারকে। কিছুদিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে গিয়ে গরুগুলোর হদিস না পেয়ে বিষয়টি আদালতে অবহিত করেন।