চট্টগ্রামে খালে পড়ে শিশু সেহরিশের মৃত্যু, ৩ মাস পর আলোর মুখ দেখল তদন্ত প্রতিবেদন

‘এ প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ধরণের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সংস্থার করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বাস্তবায়ন করতে বলা হবে।’

চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
চট্টগ্রামে খালে পড়ে শিশু সেহরিশের মৃত্যু, ৩ মাস পর আলোর মুখ দেখল তদন্ত প্রতিবেদন
চট্টগ্রামে খালে পড়ে শিশু সেহরিশের মৃত্যু, ৩ মাস পর আলোর মুখ দেখল তদন্ত প্রতিবেদন |নয়া দিগন্ত

গত ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরের কাপাসগোলায় নবাব হোটেলের পাশে রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশু সেহরিশের মা ও দাদী রক্ষা পান। ১৪ ঘণ্টা পর কয়েক কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খাল থেকে সেহরিশের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনায় চট্টগ্রামজুড়ে তোলপাড় হলে ২২ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করে সিটি করপোরেশন।

তদন্ত কমিটি তিন মাস পর মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, আট কারণে হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরিশের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে অরক্ষিত খাল, অদক্ষ রিকশাচালক ও অনিয়ন্ত্রিত গতি, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে কোনো চিহ্ন না থাকা ও অপ্রশস্ত সড়কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া বৃষ্টিপাত, বর্জ্যে খাল ও নালা পরিপূর্ণ থাকা, পর্যাপ্ত জনবল ও উদ্ধার সামগ্রীর অভাব ও জনসচেতনতার অভাব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ‘এ প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ধরণের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সংস্থার করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বাস্তবায়ন করতে বলা হবে।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর হিজড়া খালের পানিতে পাশের সড়কও ডুবে যায়। এতে খাল ও সড়ক বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। বামপাশে খাল থাকায় ডান পাশ ঘেঁষে যাওয়ার জন্য রিকশাচালককে অনুরোধ জানান সেহরীশের মা উম্মে সালমা। তিনবার অনুরোধ করলেও রিকশাচালক কর্ণপাত করেননি। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্যও অনুরোধ জানান উম্মে সালমা। তাও উপেক্ষা করেন। চালকের অদক্ষতা ও অসচেতনতার কারণে হিজড়া খালের যে অংশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না, সেখানে রিকশাটি পড়ে যায়। রিকশাটি অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় থাকলেও রিকশাচালক যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। বরং রিকশার ওপর ভর দিয়ে নিজে ওঠে পালিয়ে যান। এতে রিকশা পুরোপুরি ডুবে যায়। রিকশাতে উম্মে সালমা, তার ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশ ও মা বেগম বিবি আয়েশা ছিলেন। খালে পড়ার পর উম্মে সালমা অজ্ঞান হয়ে গেলে তার কোল থেকে শিশু সেহরিশ ছিটকে যায়। তিনজনই ভেসে যান। তবে স্থানীয় লোকজন মা উম্মে সালমা ও দাদী বিবি আয়েশাকে উদ্ধার করলেও সেহরিশকে খুঁজে পাননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজড়া খালের যে অংশে রিকশা পড়ে শিশু সেহরিশ মারা গেছে, সেখানে আগে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য তা অপসারণ করা হয়। মাটি ও আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম চলমান থাকায় তা পুনরায় স্থাপন করা হয়নি। হিজড়া খালের পাশের সড়ক নির্মাণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে কমিটির সদস্যরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। আর পাশের ভবনগুলো নির্মাণেও ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। খালের পাশের সড়কটি আরেকটু প্রশস্ত হলে এই দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত। এছাড়া আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আরো বেশ কয়েকটি পরমার্শ তুলে ধরা হয় প্রতিবদেনে।