বরিশালে দুদক চেয়ারম্যান

ভুয়া আর প্রকৃত সমন্বয়ক কাউকেই অবৈধভাবে সুযোগ দেয়ার কোনো কারণ নেই

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত নাগরিক সেবা এবং সেবার মানোন্নয়নে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো

Location :

Barishal
বরিশালে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন
বরিশালে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন |নয়া দিগন্ত

ভুয়া আর প্রকৃত সমন্বয়ক কাউকেই অবৈধভাবে সুযোগ দেয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত নাগরিক সেবা এবং সেবার মানোন্নয়নে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার পালিয়ে যায়, সরকার চলে যায় কিন্তু সার্বিকভাবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এমন একটি পর্যায়ে গেছে এবং আমরা এমনভাবে এগুলো করতে দিয়েছি শেষ পর্যন্ত সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলো ১৬ ডিসেম্বরের পরে হঠাৎ করে একটা বাহিনীর আবির্ভাব ঘটলো। আমরা সেটাকে বলতাম সিক্সটিন ডিভিশন। এবারো আপনাদের সামনে আর একটি সংকট, এখন ভুয়া সমন্বয়ক।’

এটাও সকলকে সামাল দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসেও এভাবে ভুয়া সমন্বয়ক পেয়েছি। প্রথমত সমন্বয়ক ভুয়া হন আর প্রকৃত সমন্বয়ক হন তাকে অবৈধভাবে সুযোগ দেয়ার কোনো কারণ নেই। এটা যদি আপনার এখনই প্রতিরোধ করা শুরু করেন তাহলে আগামী দিনের অনেক সংকট থেকে আপনারা মুক্ত থাকবেন। এ ধরনের অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। এখন আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ হচ্ছে একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার আছে, এটার কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাত নেই। রাজনৈতিক পক্ষপাত যদি না থাকে আমাদের কাজের পরিবেশটা অনেক ভালো হয়।’

এসময় ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন আরো বলেন, ‎‘আমরা অনেক সময় বলে থাকি প্রশাসনের রাজনীতিকীকরণ— এটা কি আসলে ব্যাপারটা তাই? নাকি উল্টো। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখি এটা উল্টা। আমরাই বরং রাজনীতিবিদদের কাছে যাই, গিয়ে বলি স্যার আমরা আপনার সেবাদাস।’

‎তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একটা স্ট্যান্ড নিতে পারি, তাহলেই আমরা পরিবর্তন আনতে পারি। এই পরিবর্তন আমাদের এবং আপনাদের পক্ষে আনা সম্ভব। আমার মনে হচ্ছে, আমরা একটা সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কারো পক্ষে ঝুঁকে পরা আমাদের জন্য ভালো হবে না। ‎আমাদের কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ সেবা প্রদান করা। আমরা সেই সেবা প্রদান করে যাব।’

‎দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের সামনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ আছে নির্বাচনের। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কথা দিয়েছেন যে, জাতিকে একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে চান। তিনি নিজে রিটার্নিং অফিসার হবেন না, আবার মাঠে নেমে তদারকিও করবেন না। তবে ওই কাজগুলো আমাদের সবার করতে হবে। কাজেই সেখানে আমাদের একটু সক্রিয় হতে হবে।’

‎তিনি বলেন, ‘দুদকের বেশি কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়। একটু কম কাজ হওয়া উচিত এখন যত দুর্নীতি না হয়। আগের দুর্নীতি নিয়ে একটু কম সময় নেয়া উচিত। দুর্ভাগ্যবশত আগে কি দুর্নীতি হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা শতভাগ সময় প্রায় কাটিয়ে দিই। আমাদেরও চিন্তাভাবনায় একটি বড় ধরনের ভুল আছে। এই ভুল থেকে আমাদেরও বেরিয়ে আসতে হবে।’

‎এ বিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘অমরত্বের বাসনা করে লাভ নেই, আমাদের মৃত্যুবরণ করতেই হবে। আমরা চেয়ার ধরে রাখতে পারব কয়দিন, একটা সময় ছাড়তেই হবে। কিন্তু যে সময়টুকু চেয়ারে থাকি সে সময়টাতে ভালো কাজ করে গেলে সেই কাজগুলোই থেকে যাবে।’

আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন যেসব অভিযোগ বিবেচনায় আনে তার মধ্যে সব থেকে বড় একটা অংশ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর। এজন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তাহলে কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি? কথা বলা কি আদৌ উচিত? আমরা যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিষ্টি কথা কিংবা কড়া কথা বলি, তাদের প্রথমে সেই কথাগুলো বলার অধিকার অর্জন করতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন, করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স নিয়ে আলাপ করলে আমরা যে খুব ভালো অবস্থানে আছি সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি একটু একটু করে চেষ্টা করি পরিবর্তনটা আমরাই আনতে পারি।’

এ সভায় মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।

এর আগে চেয়ারম্যান বরিশালে দুর্নীতি দমন কমিশনের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।