রংপুর মহানগরীতে সভা-সমাবেশ ও মিছিলের আগে পুলিশের অনুমতি নিতে গণবিজ্ঞপ্তি

জনস্বার্থে এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই বিজ্ঞপ্তি মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur Sadar
রংপুর মহানগরীতে সভা-সমাবেশ ও মিছিলের আগে পুলিশের অনুমতি নিতে গণবিজ্ঞপ্তি
রংপুর মহানগরীতে সভা-সমাবেশ ও মিছিলের আগে পুলিশের অনুমতি নিতে গণবিজ্ঞপ্তি |নয়া দিগন্ত

জনস্বার্থে এবং যানজট নিরসনে রংপুর মহানগর এলাকায় সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করার আগে পুলিশের অনুমতি নেয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি)। পুলিশের এ উদ্যোগকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন সাধুবাদ জানালেও অনুমতির পরিবর্তে অবহিতকরণ শব্দের পক্ষে তারা।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: মজিদ আলী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

এতে বলা হয়, ‘এতদ্বারা সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল/সংগঠন সংস্থা অনুমতি ছাড়া এবং বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন তখন সড়ক অবরোধ করে সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে। এতে রংপুর মহানগর এলাকায় যানজটসহ জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যেকোনো ধরনের জনসমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা করার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের পূর্বানুমতি গ্রহণ এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জনস্বার্থে রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন ২০১৮ এর ১০৯ ধারা মোতাবেক এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো। অন্যথায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, দেশের প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জনস্বার্থে এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি আছে। রংপুরেও আমরা এই বিজ্ঞপ্তিকে আমরা ওয়েলকাম জানাই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা কোনো কর্মসূচি করার আগে অবশ্যই পুলিশকে অবহিত করবো। তবে আইনগত হবে সবার জন্য সমান। কাউকে অনুমতি দেয়া হবে কাউকে দেয়া হবে না এই নীতি গ্রহণ করলে আমরা পরবর্তী অ্যাকশনে যাবো। ’

গণ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে পুলিশের এই ধরণের গণবিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া ঠিক নয়। কারণ, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল। আমরা এ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানাই। আমরা কথা বলবো সেটার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হবে এটা অগণতান্ত্রিক বিষয়। হ্যাঁ কর্মসূচির কথা অবহিত করা যেতে পারে। একই সাথে যারা রাজপথে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করেন তাদের উচিৎ যেন জনদুর্ভোগ না হয়, জানমালের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে হিসেবে সময় ও স্বেচ্ছাসেকক দিয়ে কর্মসূচি পালন করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।

গণ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাগত জানিয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামুসুজ্জামাস সামু। তিনি জানান, রংপুর মহানগর বাসিকে যানজটের কবল থেকে মুক্ত রাখতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ পদক্ষেপ ভালো। অনুমতি নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য পুলিশকে অবহিত করা হলে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দিতে তাদের সুবিধা হবে। এছাড়াও যে কোনো মিছিল সমাবেশ নগরীতে যানজট তৈরি হয়। সেকারণে বিষয়টি অবহিত করলে সেই সময়ে যানজট কমাতেও পুলিশ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের এই উদ্যোগকে অবশ্যই সবার স্বাগত জানানো উচিৎ।

এ প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক হানিফ খান সজিব জানান, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙখলা স্বাভাবিক রাখতে যেহেতু নীতিগত জায়গা থেকে জনদুর্ভোগে কমাতে আইনশৃঙখলা বাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সেটাকে আমরা প্রশংসা করছি। তবে যৌক্তিক কোন বিষয়, জনগণ, দেশ ও রাষ্টের সাথে সম্পর্কিত যদি কোন বিষয় থাকে সে বিষয়ে সভা সমাবেশ মিছিল হবে। বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করা দোষের কিছু নয়। তবে তাদের অনুমতির কোনর দরকার নেয়। অবহতি হয়ে আইনশৃঙখলা বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করবে এটা তাদের দায়িত্ব।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির যুগ্ম-সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাদিয়া ফারজানা দিনা জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুর মহানগর পুলিশের এ উদ্যোগ ঠিক আাছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে শঙ্কাও আছে যেভাবে প্রশাসন কারো প্রভাবিত হয়ে রংপুরে আওয়ামী রেজিমকে শেল্টার দিতে এটা করছে কিনা। যেটা বিগত কিছুদিন থেকে রংপুরে জাতীয় পার্টিকে দিচ্ছে প্রশাসন। দেশ, জনগণ, রাষ্টের বিপক্ষে এবং আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে দেশবাসীর অবস্থান পরিস্কার। অনুমতির নামে যদি কাউকে শেল্টার দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তাহলে আমরা সেটার বিরুদ্ধে মাঠে থাকবো।’

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মজিদ আলী জানান, জনস্বার্থে এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই বিজ্ঞপ্তি মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।