সিলেটে জামায়াতের গণমিছিল

‘বিএনপি দেরিতে হলেও জুলাই সনদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে’

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
৫-দফা দাবিতে সিলেটে জামায়াতের গণমিছিল
৫-দফা দাবিতে সিলেটে জামায়াতের গণমিছিল |নয়া দিগন্ত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি প্যাঁচ লাগিয়ে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, বিএনপি দেরিতে হলেও জুলাই সনদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘বিএনপি দেরিতে হলেও জুলাই সনদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি মানলেও সব মানেনি। তারা গণভোটে একমত হয়েছে। তবে বিএনপি সেটা জাতীয় নির্বাচনের দিন চায়, এ প্যাঁচটা তারা লাগিয়ে রেখেছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, এটাও তারা বুঝতে পারবে। জুলাই আন্দোলনে দু’হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ আহত হয়েছে। সুতরাং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য পরবর্তী সংসদের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। অবিলম্বে এ সরকারের আমলেই জুলাই সনদের বাস্তবসম্মত আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, এটা জাতির জানা উচিত। তারা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব চায় না। প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা থাকলে নতুন মোড়কে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। হাসিনা আওয়ামী ভার্সনে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। পুরাতন পদ্ধতি বহাল থাকলে নতুন মোড়কে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান জুবায়ের বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি পৃথিবীর ৮৬টি দেশে চালু রয়েছে। এ পদ্ধতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়তে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে আর যাতে স্বৈরশাসন ফিরে না আসে, এজন্য কার্যকর সমাধান পিআর। সরকারকে অবিলম্বে দাবি মেনে নিতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে আত্মঘাতী। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে কেউ কখনো হারেনি। হাসিনাও একই কায়দায় নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকেছে। তারা বিরোধীদের জেল-জুলুম হত্যা ও আয়নাঘরে বন্দী করে রেখেছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।’

জামায়াত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, জামায়াত সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করছে, যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সকল মানুষ সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাস করবে। যেখানে কোনো শ্রেণী বিভাজন থাকবে না। স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদি শাসনের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারের বিদায় হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তারা সংস্কার কমিশন গঠন করে শতাধিকেরও বেশি বিষয় থেকে ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে কোনো হাতাহাতি হয়নি। এটা স্বাধীনতার পর অসাধারণ উদ্যোগ ও পরিবেশ। জামায়াতে ইসলামীও ওই ঐকমত্য কমিশনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। আশা করি সরকার খুব দ্রুত জুলাই সনদ অধ্যাদেশ জারি করবে।’

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সিলেট-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমেদ, সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু ও সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সিলেট-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান প্রমুখ।

মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে এ পরিবেশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ রক্তের সাথে বেঈমানি করে কেউ পার পাবে না। কাজেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে নির্বাচন হবে না। কোনো ইগো না দেখিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এক জায়গায় এসে তা বাস্তবায়িত করতে হবে। যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হয়, তা হলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে। এ সরকারের সবাইকেও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাবে। সুতরাং জুলাই সনদের বাস্তবসম্মত আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুনি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে দেশের চেয়ে বড় হয়ে ওঠেন ব্যক্তি। এ ব্যবস্থা বিলোপ করতে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। আপনারা ৯১ সালেও কেয়ারটেকার সরকার বুঝেন নাই, কিন্তু দেরিতে হলেও পরে বুঝতে পেরেছেন। এখন পিআর পদ্ধতি বুঝতে পারছেন না, দেরিতে হলেও সেটা বুঝতে পারবেন এ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা।’

সমাবেশ শেষে কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি গণমিছিল বের হয়ে জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা হয়ে আম্বরখানায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে জামায়াত ও শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মী ছাড়াও একই দাবিতে ইসলামি আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা একাত্মতা পোষণ করে অংশ নেন।