রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সকল ইতিবাচক সংবাদ বর্জন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ এবং জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে বুধবার রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে মারধর এবং পরবর্তীতে সাংবাদিকদের আটকে রেখে হেনস্তা করার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আয়োজনে মানববন্ধনে অংশ নেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে, প্রেস ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন, অনলাইন জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাব, পীরগাছা প্রেসক্লাব, কাউনিয়া প্রেসক্লাব, মিঠাপুকুর প্রেসক্লাব, বদরগঞ্জ প্রেসক্লাব, গঙ্গাচড়া প্রেসক্লাবসহ মহানগরী ও উপজেলায় কর্মরত দুই শতাধিক সাংবাদিক।
এসময় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রথম যুগ্ম-সমন্বয়ক আলমগীর নয়ন, আমার বাংলাদেশ পার্টির রংপুর জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজওয়ানুল বারি, আইনজীবি পলাশকান্তি নাগ, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক বেলাল হোসেন প্রমুখ।
এসময় বক্তারা অভিযোগ করেন, জুলাই যোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে অটোরিকশার লাইসেন্স নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক বাদলকে অপহরণ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার রুমের সামনে নিয়ে গিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধানের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মব তৈরি করে সাংবাদিকদের সিটি ভবনের ভেতরে আটকে রেখে হেনস্তা করার ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করে গ্রেফতারের দাবি জানানোর মতো ধৃষ্টতাও তারা দেখিয়েছেন।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, এসব ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার অপচেষ্টা। একটি পক্ষ এসব ঘটনা ঘটিয়ে জুলাই স্পিরিটের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকারের নানামুখি পদক্ষেপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
পরে আরপিইউজে সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, ‘অটো রিকশার লাইসেন্সের জন্য জুলাই যোদ্ধার নামে কারা কারা আবেদন করেছেন। তাদের তালিকা ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। সম্প্রতি আদালতে মামলা থাকা পরও যে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
পরে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার এবং প্রধান নির্বাহী উম্মে ফাতেমা এবং ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজুসহ মব সৃষ্টিকরে হেনস্তাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করা না হলে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ কমিশনার অফিস ঘেরাও করা হবে।
এছাড়াও সিটি করপোরেশনের ইতিবাচক সকল সংবাদ পরিবেশন বন্ধ রেখে দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রচার-প্রকাশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বাদলকে দৈনিক সংবাদে সম্প্রতি ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের পায়ঁতারা’ শিরোনামে খবর পরিবেশনের জেরে কাচারীবাজার থেকে অপহরণ করে নিয়ে সিটির প্রধান নির্বাহী অফিসের সামনে নিয়ে নিউজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য করার চেষ্টা ও মারধর করা হয়। সেখানে সাংবাদিকরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করার পর অবস্থানকর্মসূচি শেষে ফেরার সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মব তৈরি করে প্রধান ফটক আটকে দিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করেন। এঘটনায় ক্ষুব্ধ রংপুরের সাংবাদিক সমাজ।