নাটোর-ঢাকা রুটে আবারো বন্ধ বাস চলাচল, ভোগান্তিতে হাজারো যাত্রী

এ বিষয়ে নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি লক্ষণ পোদ্দার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাটোর প্রতিনিধি

Location :

Natore
নাটোর-ঢাকা রুটে আবারো বন্ধ বাস চলাচল
নাটোর-ঢাকা রুটে আবারো বন্ধ বাস চলাচল |নয়া দিগন্ত

নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবার ঢাকামুখী যাত্রীবাহী বাস চলাচল হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন কাউন্টার থেকে বাস বন্ধের বিষয়ে জানানো হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।

এদিকে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) যাদের ঢাকা যাওয়ার টিকিট কাটা ছিল তাদের রাতেই ফোন করে বাস না চলার বিষয়টি জানানো হয়।

নাটোরের হানিফ পরিবহনের শ্রমিক মো: সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মবিরতি বেতন বৃদ্ধির জন্য। এর আগে এক বৈঠকে আমাদের বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিল মালিকপক্ষ কিন্তু করেনি। ১৫ বছর আগের যে বেতন ছিল সেই বেতনই দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। চাপাই টু ঢাকা একটা হেল্পার পায় ৫৩০ টাকা, সুপারভাইজার পায় ৫৭০ টাকা। কখনো ২৪ ঘণ্টা, কখনো ৩০ ঘণ্টাও লেগে যায়। এক ট্রিপ শেষে আবারো ২৪ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এভাবে মাসে আমরা ১১ থেকে ১২টা ট্রিপ পাই। এখন সবকিছুরই দাম বেশি। আমরা যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। মানুষদের নিরাপদে এতদূরে পৌঁছাই কিন্তু আমরা ন্যায্য বেতনটা পাই না।‘

দেশ ট্রাভেলস গাড়ির ড্রাইভার মো: আসাদ বলেন, ‘এর আগে মালিকপক্ষ তিনটা ডেট নিয়েছেন। কিন্তু রেজাল্ট দেয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ড্রাইভারদের ১ হাজার ৩৫০ টাকা দেয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি চাপাই থেকে ঢাকা আপডাউনের বেতন ধরতে হবে ২ হাজার ২০০ টাকা, রাজশাহী থেকে দুই হাজার টাকা। সুপারভাইজার ১ হাজার ২০০ টাকা, হেলপার ১ হাজার ১০০ টাকা।

ন্যাশনাল ট্রাভেলসের আরেক কর্মী মামনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আগের বেতন পরিবর্তন করে নতুন বেতন কাঠামো করতে হবে। একটা যৌক্তিক বেতনের দাবি বিবেচনা করতে হবে, না হলে আমাদের চলা অসম্ভব। এছাড়া আমাদের যে খোরাকি ৭০ টাকা সেটাও ১০০ টাকা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে এ আন্দোলন চলবে।’

জানা যায়, সঙ্কট নিরসনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি ট্রিপে চালককে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৭৫০ টাকা এবং সহকারীকে ৭০০ টাকা দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে মালিকপক্ষ বাড়তি বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় পূজার আগে দু’দিনের ছুটিতে বাস ও ট্রেনে যাত্রীচাপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। ঘোষণাবিহীনভাবে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

নাটোর থেকে ঢাকায় আসার জন্য শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দেশ ট্রাভেলসের এসি বাসের টিকিট কেটেছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুধা রানী সরকার। তিনি তার মা ও মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় যাবেন।

তিনি জানান, ‘রাত সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ করেই কাউন্টার থেকে ফোন করে জানানো হয় শুক্রবার কোনো বাস চলবে না। কবে থেকে চলবে তাও বলতে পারেননি কাউন্টারের ওই ব্যক্তি। টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুক্রবার সকালে যোগাযোগ করতে বলেন।‘

ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘হঠাৎ করেই পূর্বঘোষণা ছাড়া মালিকপক্ষ এভাবে বাস বন্ধ করায় সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। শুধু ওই শিক্ষিকা নয় শত শত যাত্রী এমন ভোগান্তির শিকার।’

নাটোর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মালিকদের সাথে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে বাড়তি বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বাস্তবায়নের আগেই কোনো ঘোষণা ছাড়া বাস বন্ধ করা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এতে যাত্রীরা যে ভোগান্তিতে পড়েছেন তা বলার মতো নয়।’

এ বিষয়ে নাটোর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি লক্ষণ পোদ্দার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একতা ট্রান্সপোর্টের বাসগুলো রাজশাহী-ঢাকা রুটে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে।

Topics