পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ছে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের গোলাপী শাপলা

মির্জাপুরের গোলাপী শাপলার বিল এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকের আকর্ষণ। প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক।

এম এ রকিব, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)

Location :

Maulvibazar
গোলাপী শাপলা।
গোলাপী শাপলা। |নয়া দিগন্ত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চায়ের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের গোলাপী শাপলা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ছে। হাওরের পশ্চিম প্রান্তে গোপলা নদীর আশপাশে বোরো ধানের জমিজুড়ে ফোটে থাকা অগণিত গোলাপী শাপলা এখন পর্যটকদের নতুন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব দিকে বিস্তীর্ণ হাত্তরজুড়ে ফুটে থাকা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসহ প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতিদিনই ছুটে আসছেন হাওরপাড়ে। ইতোমধ্যে স্থানীয়সহ শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নতুন গন্তব্যও হয়ে উঠেছে গোপলার পাড়ের গোলাপী শাপলা বা পিংক ওয়াটার লিলির জলাশয়। তবে অনেকেই শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে শাপলা তুলে আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

জানা যায়, শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব পাশে হাইল হাওড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিবছরই শাপলা ফোটে। কিন্তু প্রচার-প্রচারণার অভাবে এর সৌন্দর্য সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়নি। এবার কয়েকজন ব্লগার ছবিসহ তথ্য প্রকাশ করলে মুহূর্তেই জনপ্রিয়তা পায় এ স্থানটি।

স্থানীয়রা জানায়, হাইল হাওরের হাজার হাজার গোলাপী শাপলাগুলো ভোরের প্রথম আলোয় যখন একসঙ্গে ফুটে ওঠে, তখন পুরো এলাকাজুড়ে যে নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তা এক কথায় মনোমুগ্ধকর। দুপুরে কিছুটা নিস্তেজ হলেও বিকেলে আবার জলাভূমিতে মনোরম সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়। সে দৃশ্যই দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে হাওর ও হাওরপাড়ের গ্রামীণ সড়ক।

সিলেট শহর থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর থেকেই শাপলা বিলে ছড়িয়ে পড়ে অপূর্ব সৌন্দর্য। দুপুরে কিছুটা ম্লান লাগলেও বিকেলে আবারো রঙ ছড়ায় শাপলাগুলো। একসঙ্গে এত এত শাপলা আগে কখনো দেখেননি। ফুটন্ত শাপলাগুলো জলাভূমিকে যেন অন্য রকম নতুন সাজে সাজিয়ে রেখেছে। পুরো দিনটি আমরা শাপলার সাথে কাটিয়েছি এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছি।’

শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে শাপলা তুলে ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতিপ্রেমী, শিক্ষক ও সৌখিন ফটোগ্রাফার তারিক হাসান।

তিনি তার নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে একটি পোস্ট করে বলেন, ‘আচ্ছা রে, তোমরা যে শাপলা বিলে গিয়ে ইচ্ছা মতো ফুল তুলে আনো, এইগুলো এনে কাকে দাও? এটা কোনো কালচার তোমাদের যে যেখানেই যাও সব উজাড় করে দাও পঙ্গপালের মতো? তোমাদের হাতে কাশফুল নিরাপদ না, শাপলাফুল নিরাপদ না, পরিবেশ-প্রতিবেশ কোনোকিছুই নিরাপদ না!’

ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আগে এখানে তেমন মানুষ আসত না। এখন দূর-দূরান্ত থেকে শাপলার দৃশ্য দেখতে মানুষ আসে। বিনোদনের জন্য দারুণ একটি স্থান তৈরি হয়েছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে গোলাপি শাপলা দেখতে আসছেন দেখে ভালো লাগছে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিছলু আহমদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাপলার বিলের ছবি ভাইরাল হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা গত কিছুদিনে দ্রুত বেড়েছে। আগে এখানে কেউ আসত না, এখন প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীরা আমাদের এলাকায় আসছেন এবং নৌকায় ঘুরে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আমাদের প্রত্যান্ত এলাকায় এতো মানুষের ভিড় ভালোই লাগে। প্রতি বছরই বর্ষার শেষে এভাবেই বিস্তীর্ণ এলাকায় শাপলা ফুটে। সেটি শুষ্ক মৌসুমেও থাকে। তবে মির্জাপুর বাজার থেকে হাওরপাড়ের গ্রামীণ সড়কটি যদি উন্নত করা যায় তাহলে এ জায়গাটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিণত হবে এবং বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘মির্জাপুরের গোলাপী শাপলার বিল এখন দেশ-বিদেশের পর্যটকের আকর্ষণ। প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। প্রয়োজনীয় সুবিধা ব্যবস্থার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।’