জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকিতে জেলেদের জীবন

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, চরফ্যাশন (ভোলা)

Location :

Bhola
সমুদ্র
সমুদ্র |প্রতীকি ছবি

ভোলার চরফ্যাশনে কোস্ট ফাউন্ডেশনের ’জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকিতে সমুদ্রগামী জেলেরা : নেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে সমুদ্রগামী ট্রলারে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী রাখা হয় না বলে জানান বক্তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে মৎস্যঘাটের তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এম এ হাসান চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্যঘাটের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারগুলোর মাত্র ৬ শতাংশ ট্রলারে জিপিএস আছে, বড় ও মাঝারি এক হাজার ৩৭৮টি ট্রলারের ৯০ শতাংশের কোনো নিবন্ধন নেই। বড় ট্রলারে ২০-২৫ জন জেলের বিপরীতে থাকে মাত্র ৩-৪টি লাইফ জ্যাকেট আছে। বেশিরভাগ ট্রলারেই লাইফ বয়া ও ফ্লেয়ারসহ ১৭ ধরনের বাধ্যতামূলক সুরক্ষা সরঞ্জামের কোনোটিই নেই।’

জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভিএইচএফ, ওয়্যারলেস বা জিপিএস না থাকায় গভীর সমুদ্রে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ঝড়ের সময় সীমিত লাইফ জ্যাকেট নিয়ে জেলেদের মাঝে সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়। সরকার বা ট্রলার মালিকরা এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। যান্ত্রিক ত্রুটিতে ট্রলার বিকল হলে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেই। স্রোতের টানে পাশের দেশে চলে গেলে উদ্ধার ও যোগাযোগ তৎপরতা প্রায় শূন্য।

সেমিনারে বক্তারা সমুদ্রগামী জেলেদের সুরক্ষায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন।

সুপারিশগুলো হলো- আবহাওয়া সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নসহ জেলেদের দ্রুত বার্তা পৌঁছানোর এসএমএস অ্যালার্ট ও ভিএইচএফ রেডিও চালু করা; সব ট্রলারে বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, ফ্লেয়ার ও জিপিএস নিশ্চিত করা; নৌযানের কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা; জেলেদের নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, আবহাওয়া সংকেত বোঝা, জিপিএস/ভিএইচএফ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ; নিরাপদ ঘাট, আশ্রয়কেন্দ্র ও শেল্টার নির্মাণ; জেলেদের জন্য জীবন বীমা, দুর্ঘটনা বীমা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা; ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিকল্প জীবিকার প্রশিক্ষণ ও আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ।

বক্তারা বলেন, জেলেদের জীবন বাঁচাতে হলে সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সরকারি নজরদারি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় সমুদ্রগামী জেলেদের প্রাণহানি থামানো কঠিন হবে।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম এ হাসানের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: লোকমান হোসেন। এতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জি এম ওয়ালিউল ইসলাম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক রাশেদা বেগমসহ আমন্ত্রিত অতিথি, সমুদ্রে মাছ শিকারকারী জেলে, ট্রলার মালিক, বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।