আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে পুলিশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় সচল থাকবে ১৫টি টোল বুথ।
এছাড়া সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহন ও মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় ঠেকানোসহ টোল আদায় কার্যক্রম সার্বক্ষণিক সচল রাখতে নেয়া হয়েছে বিশেষ বাড়তি ব্যবস্থা।
এদিকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা, ছনবাড়ী, খানবাড়ীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাড়তি টহল টিম বসিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বেপরোয়া গতি ও ওভার ট্রেকিং বন্ধে টহল কার্যক্রম জোরদার করেছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ বিভাগ।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গেল ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহনগুলো দ্রুততম সময়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে যানবাহন চলার নির্দেশনা দিয়েছিল সেতু বিভাগ। আর এতে করে এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট না হওয়ার পাশাপাশি কোনো যানবাহনকে আটকে থাকতে হচ্ছে না।
এছাড়া ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় সাতটি ও জাজিরা প্রান্তে আটটিসহ মোট ১৫টি বুথ সচল রয়েছে। প্রয়োজনে বাড়তি মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় ঠেকাতে মাওয়া প্রান্তে আরো একটি অস্থায়ী বুথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টোলপ্লাজা ফাঁকা ছিল। ঈদের আগ মুহূর্তে (৪ জুন) বুধবার থেকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত পাঁচ দিনেও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনের বাড়তি চাপ এখনো শুরু হয়নি। ২৮ মে রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় মাওয়া প্রান্তে নয় হাজার ৬৩৬টি ও জাজিরা প্রান্তে নয় হাজার ৬০১টিসহ মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৯হাজার ২৩৭টি। ২৯ মে ২৪ ঘণ্টায় মাওয়া প্রান্তে আট হাজার ৫৩৭টি ও জাজিরা প্রান্তে আট হাজার ৪৫৪টিসহ মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯১টি। ৩০মে দু’প্রান্তে মোট পারাপার হয়েছে ১৮ হাজার ৯৩৫টি। ৩১মে পারাপার হয়েছে ১৯ হাজার ৩২টি যানবাহন। ১ জুন দু’প্রান্তে মোট পারাপার হয়েছে ২০ হাজার ৬০২টি।
সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় নয়া দিগন্তকে জানান, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় মোট ১৫টি টোল বুথ চালু রাখা হয়েছে। সেতুর দু’প্রান্তে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দু’টি লেনে পৃথক দু’টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মোটরসাইকেলের উপচে পড়া ভিড় ঠেকাতে আরো একটি অস্থায়ী বুথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এটি চালু করা হয়। এগুলো কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ডেটা ইনপুট করেই টোল কালেকশন করা হবে। একইসাথে ঈদের আগ মুহূর্তে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামলাতে টোল প্লাজায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা দিতে তাদের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাসহ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে চারজন অতিরিক্ত টোল কালেক্টর।
হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী নয়া দিগন্তকে জানান, পদ্মা সেতু হয়ে এ মহাসড়কে ঢাকাগামী কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের চাপ রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও পশুবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ নিশ্চিত করাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বেপরোয়া গতি ও ওভার ট্রেকিং বন্ধে বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে হাইওয়ে পুলিশের টহল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া গত সোমবার (২জুন) থেকে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের আটটি ইউনিট দিন রাত কাজ করছে।
আনফিট যানবাহন প্রসঙ্গে তিনি জানান, আনফিট কোনো যানবাহন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি এ মহাসড়কে। দৃশ্যমান হলেই আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা দ্রুততম সময়ে সমাধানের জন্য তাৎক্ষণিক রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেতু এলাকায় থানা পুলিশের তিনটি টহল টিম করছে। একইসাথে ডিবি পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশের একাধিক টিম কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নজরদারিতে যুক্ত রয়েছে ১৩৩টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা
ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা ও অধিকতর নিরাপত্তাজনিত নজরদারিতে পদ্মা সেতু ও সেতুর দু’প্রান্তে অত্যাধুনিক সার্ভিলেন্স সিস্টেমের ১৩৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতু চালুর পর থেকে ধাপে ধাপে বসানো হয়েছে চার ধরনের এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরা।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পদ্মা সেতুর উত্তর থানার সামনে থেকে শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানা পর্যন্ত দু’প্রান্তের টোল প্লাজা, টোল বুথ, ওজন স্কেল, সার্ভিস এলাকা ও সংযোগ সড়কে এসব ক্যামেরা যুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্য থেকে রেল চলাচলে সেতুর লোয়ার ডেকেও এসব ১০টি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। এতে করে পদ্মা সেতু ও আশেপাশের স্থানগুলোতে বুদ্ধিমান পরিবহন ব্যবস্থা বা ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেমের বা (আইটিএস) আওতায় চলে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়া জাজিরা থেকে পাচ্চর পর্যন্ত সংযোগ সড়কে আরো ১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলেও সেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাওয়া সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল, ব্রিজ অ্যান্ড বিইএফ ও রোড আরটিডব্লিউ অ্যান্ড বিল্ডিং) আবু সায়াদ নিলয় জানান, পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেক, আপার ডেক, সংযোগ সড়ক, ওজন স্কেলসহ দু’পাশের টোলপ্লাজায় এসব ক্যামেরা দিয়ে ফুল অপারেশনে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দু’পাশের প্রায় ১৪কিলোমিটার সড়কে সিসি ক্যামেরা যুক্ত থাকায় সেতুতে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম বা আইটিএস-এর আওতায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।