জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে খালের ওপর বাঁশ আর ড্রামের অস্থায়ী ভেলা বানিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন শিশু, বৃদ্ধ, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে আশপাশের ১৫ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের তালের তল খালের ওপর সেতু নির্মাণ কাজ চার বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি। সেতু না থাকায় প্রতিদিন এমন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গ্রামের হাজারো মানুষ।
এলাকার আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, ‘সেতুটির কাজ কবে শেষ হবে তা আমরা জানি না। প্রতিদিন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা খাল পার হতে হচ্ছে। শিশু আর বৃদ্ধদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, আর বর্ষা মৌসুমে তো এই দুর্ভোগের শেষ নেই।’
স্থানীয় কৃষক শামীম আক্ষেপ করে বলেন, ‘সেতু না থাকায় ধান-চালের বাজারজাত করা যায় না, সময়মতো জমিতে চাষ দেয়া যায় না। সেতুটি দ্রুততম সময়ে সম্পূর্ণ করা খুব দরকার, তবেই আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাব।’
পল্লী চিকিৎসক আশরাফুল আলম বলেন, ‘জরুরি রোগীর চিকিৎসা করানোর সময় খাল পারাপারে অনেক কষ্ট হয়। সেতুর অভাবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। সেতুটি যত দ্রুততম সময়ে সম্ভব কাজ শেষ করা দরকার।’
অন্য একজন বলেন, ‘সেতুর দু’পাশের পিলারের কাজ শেষ করতে চার বছর কেটে গেছে, আর মাঝের পিলারের কাজ কবে শুরু হবে তা জানি না। ‘পানি কমলেই কাজ শুরু হবে’ এই আশ্বাস শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি।’
অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে তালের তল খালের ওপর ৪২ মিটার দীর্ঘ এবং পাঁচ দশমিক পাঁচ মিটার প্রশস্ত সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকা।
দীর্ঘদিন কাজ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে খালের ওপর ড্রামের অস্থায়ী ভেলা বানিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহুরুল হক ট্রেডার্সের দায়িত্বে থাকা রনির সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
সেতুটির কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ এবং উৎকণ্ঠা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সবার প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ে সেতুটির কাজ সম্পূর্ণ করে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটাবে কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান জানান, ‘সেতুটির কাজ চলমান রয়েছে। খালের পানি বেশি থাকায় মাঝের পিলারের কাজ করা যায়নি। পানি কমতে শুরু করলে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করছি।’