পুণ্যস্নানে শেষ হলো দুবলার চরের রাস উৎসব

নিয়মানুসারে আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের পর্দা টানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

মো: আনোয়ার হোসেন, শরণখোলা (বাগেরহাট)

Location :

Bagerhat
ভোরে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু ভক্তবৃন্দ আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে নেমে স্নান করেন
ভোরে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু ভক্তবৃন্দ আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে নেমে স্নান করেন |নয়া দিগন্ত

শেষ হয়েছে সুন্দরবন দুবলার চরের প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ উৎসব। নিয়মানুসারে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের পর্দা টানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু ভক্তবৃন্দ আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে নেমে এ স্নান করেন।

জানা যায়, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ স্নানোৎসব। স্নান শেষে পূজা-আর্চনা সম্পন্ন করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন ভক্তবৃন্দরা।

বনবিভাগ জানায়, এ বছর রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাড়ে ১৩ হাজার সনাতন ধর্মের রাধা-কৃষ্ণের ভক্ত অনুসারীর আগমন ঘটে। আগত ভক্তরা গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে দুবলার আলোরকোলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে পূজা-আর্চনাসহ লীলা কির্তনে মাতোয়ারা হন। রাস পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর ও আলোরকোলজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

তারা জানায়, পুণ্যার্থী ও পূজাস্থলের নিরাপত্তা এবং এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করেছে। বিশেষ করে কোস্টগার্ডের একাধিক স্টেশন ও আউটপোস্টের সদস্যসহ উদ্ধারকারী জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলা’ ও ডুবুরি দল পূজা ও সমুদ্র সৈকতের স্নান স্থলে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল। এছাড়া উৎসবস্থলে বাগেরহাট ও খুলনার জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুপুরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে সুমন নামে এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে কোস্টগার্ডের স্বাধীন বাংলা জাহাজ তল্লাশি করে বিকেলে তাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

রাস উৎসব উদযাপন পরিষদ ও দুবলার চর ফিমারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুর্গম বঙ্গোপসাগর পাড়ে প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে হিন্দু ধর্মের এ রাস উৎসব ও রাস মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ লাখ লাখ পূজার্থীর আগমন ঘটতো এখানে। কিন্তু সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের পর থেকে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ। এখন সীমিত আকারে শুধু হিন্দু ধর্মের মানুষের জন্য এ পূজা স্থলে আসার অনুমতি দেয়া হয় বনবিভাগ থেকে। এবারে রাস পূজা বনবিভাগ ও একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।’

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব বলেন, ‘তিন দিনের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছিলেন। উৎসবটি সফল ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।’