মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শাহাবাজপুরে পাহাড়ি সবজি ‘বাঁশ কোড়ল’ এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত ১২ অক্টোবর ২০২৪ নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের পর থেকে এ চাহিদা আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, জুরী ও বড়লেখা উপজেলার মানুষের কাছে বাঁশ কোড়ল একটি জনপ্রিয় খাবার। এমনকি পর্যটক ও হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতেও এর চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাঁশ কোড়ল হলো কচি বাঁশের খাদ্য উপযোগী অংশ। পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীরা পাহাড় কাটা, আগুন লাগা ও বসতবাড়ি নির্মাণের কারণে বাঁশের সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই তারা পাহাড়ের গভীরে গিয়ে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে থাকে। এখন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অনেক বাঙালিও এই সুস্বাদু সবজিটি পছন্দ করছে।
ভানুগাছ বাজারে সবজি ব্যবসাই আব্দুল করিম বলেন, ‘১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই বাঁশ কোড়ল বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ সবজি পাওয়া য়ায়। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশের কোড়ল পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র মানুষেরা বনের গহিন থেকে এই বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। মাটি থেকে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলেই এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। বাঁশের জাতের ভিন্নতার সাথে সাথে বাঁশ কোড়লের স্বাদেও ভিন্নতা আছে।’
শাহবাজপুর বাজার এলাকার এক সবজি বিক্রেতা জানান, ‘মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকাল-বিকেল জেলা ও উপজেলা শহরে এবং স্থানীয় হাটবাজারে আগে প্রচুর পাওয়া যেত এই বাঁশ কোড়ল। এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।’
স্থানীয়রা বলেন, ‘বাঁশ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই বাঁশ কোড়ল আগের মতো এখন তেমন আর বাজারে পাওয়া যায় না। প্রতি রোববার ও বুধবার ১০ থেকে ১৫ কেজি পাওয়া যায়।’
ডা: আব্দুর রাজ্জাক নয়া দিগন্তকে বলেন, বাঁশ কোড়ল বেশ সুস্বাদু এবং উপকারী একটি সবজি। এর পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে এর ভালো ভূমিকা আছে। চীনারা বাঁশ কোড়লকে 'স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা' বলে থাকেন।
শাহবাজপুর বাজারে নিয়ে আসা এক বাঁশ কোড়ল বিক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বনের গহিনে যাই বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করতে। বিকেলে বাজারে নিয়ে আসি বিক্রি করতে। প্রতিদিন ৩ হাজার হতে ৫ হাজার টাকার বাঁশ কোড়ল বিক্রি করে থাকি।’